প্রায় পৌনে ন’কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হচ্ছে রাজভবন সংস্কার। ২১১ বছরের ঐতিহ্যবাহী ওই ভবনে এই প্রথম এত বড় মাপের সংস্কার হচ্ছে। এই খরচের ৭০ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার। ৩০ শতাংশ আসবে যোজনা কমিশন থেকে।
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে চিৎপুরের নবাব রেজা খানের জমিতে ‘বাকিংহাম হাউস’ নামে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন ব্রিটিশ রাজপুরুষরা। গোটা তল্লাটে তখন বাড়ছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। লর্ড কর্নওয়ালিস ওই জমিতে রাজপুরুষদের থাকার জন্য একটি প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৭৯৯ থেকে চার বছর ধরে তৈরি হয় রাজভবন। ২৭ একর জমির উপর প্রায় ৮৪ হাজার বর্গফুটের নির্মাণ। খরচ পড়েছিল ৬৩ হাজার ২৯১ পাউন্ড। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশরাজের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ১৮৫৮ থেকে এটি হয়ে উঠল ভাইসরয়ের বাড়ি। ১৯১১-য় কলকাতা থেকে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরের পরে এটি হল বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সাকিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রাজ্যপালের নিবাস হয় এটি। দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্ট অতিথিরাও সময়বিশেষে থাকেন এই রাজভবনে।
রাজভবনে ঘরের সংখ্যা ৬০। পূর্ত দফতর নিয়মিত এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। কিন্তু এর সংস্কার অবশ্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। তা নিয়ে বছর চার ধরে কেন্দ্র-রাজ্য বিভিন্ন স্তরে চিঠি চালাচালি হয়। রাজভবনের যুগ্ম সচিব সুশান্ত রঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, “২০১১-২০১২ অর্থবর্ষে এ জন্য ৮ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। বলা হয়, এর ৭০ শতাংশ আসবে যোজনা কমিশন থেকে। বাকিটা দেবে রাজ্য সরকার।”
কিন্তু এর পরেও কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে কেন? পূর্ত দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “কাজ কী ভাবে হবে, তা ঠিক করতে প্রথমে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়। রাজভবনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে আছেন রাজ্য আবাসন দফতরের সচিব করুণ দে এবং সরকারের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য স্থপতি সুকৃত চট্টোপাধ্যায়। আছেন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষকও। তাঁরা কয়েক দফা সমীক্ষার পরে সুপারিশ করেন। করুণবাবু বলেন, “গোটা রাজভবনের পর্যাপ্ত সংস্কারের জন্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা দরকার। তাই যে কাজগুলি এখনই করা দরকার, আপাতত সেগুলিই করা হবে।”
সুশান্তবাবু বলেন, “কাজটা মূলত করবে কনজারভেশন আর্কিটেক্ট। এ ব্যাপারে কোন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে একটু সময় লেগেছে।” প্রথমে গোটা রাজভবনের ছাদের মেরামতি এবং উত্তর-পূর্ব কোণের তিন তলা ভবনের বিভিন্ন তলে মেরামতির কাজ হবে। আবাসন সচিব বলেন, সংস্কারের কাজ শেষ হতে অন্তত সাত মাস সময় লাগবে।