শহরকে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে মেঘ-বৃষ্টি

নাছোড় গরমের পরে কি এ বার মেঘ-বৃষ্টির পালা! পরপর তিন দিন ঝড়-বৃষ্টির জেরে এই প্রশ্নটাই ঘোরাফেরা করছে আবহবিজ্ঞানীদের মধ্যে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ জুড়ে কলকাতায় বয়েছিল তাপপ্রবাহ। টানা পাঁচ দিনেও মহানগরের পিছু ছাড়েনি পোড়ানো গরম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০২:০৩
Share:

বৃষ্টি চৌরঙ্গিপাড়ায়:ধারাস্নান। রবিবার সন্ধ্যায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নাছোড় গরমের পরে কি এ বার মেঘ-বৃষ্টির পালা! পরপর তিন দিন ঝড়-বৃষ্টির জেরে এই প্রশ্নটাই ঘোরাফেরা করছে আবহবিজ্ঞানীদের মধ্যে।

Advertisement

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ জুড়ে কলকাতায় বয়েছিল তাপপ্রবাহ। টানা পাঁচ দিনেও মহানগরের পিছু ছাড়েনি পোড়ানো গরম। যার জেরে নাজেহাল হতে হয়েছিল শহরবাসীকে। মাস শেষ হতে না হতেই সেই জায়গাটা নিয়েছে বজ্রগর্ভ মেঘ-বৃষ্টি। তার জেরে স্বস্তিই ফিরেছে মহানগরে। পরিমণ্ডলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নাজেহাল করা গরম ফিরে আসতে পারে, এমনটাও মনে করছেন না আবহবিজ্ঞানীরা।

গত চার দিন ধরে বিকেল হলেই আকাশ ঢাকছে মেঘের আড়ালে। শুক্রবার ৩৯ দিন পরে বৃষ্টি নেমেছিল শহরে। শনিবার হাজির হয় মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী। রবিবার রাতেও ফের ঝড়-বৃষ্টি আছড়ে পড়ল কলকাতায়। যার ধাক্কায় রাতে শহরের তাপমাত্রা বেশ কিছুটা নেমে যায়। এর প্রভাবে আজ, সোমবারেও শহরের দিনের তাপমাত্রা তেমন বাড়বে না বলেই আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

Advertisement

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এপ্রিল শেষ হতেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে একটি পরিবর্তন ঘটেছে। এপ্রিল জুড়ে জোলো হাওয়ার পরিমাণ ছিল কম। মে মাস থেকেই তা বাড়তে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এর পিছনে রয়েছে বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় থাকা একটি ঘূর্ণাবর্ত। সেটির প্রভাবেই মেঘ তৈরি হচ্ছে বলে আবহবিজ্ঞানীরা জানান। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, শনিবার ঘূর্ণাবর্তটি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে হাজির হয়েছিল। “তার ফলেই ওই দিন সকালে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়। কোথাও কোথাও দমকা হাওয়া-বৃষ্টিও হয়েছিল”, বলছেন আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী।

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার ঘূর্ণাবর্তটি ফের বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকার উপরে চলে গিয়েছে। তার ফলে এ দিন সকাল থেকে আকাশে তেমন মেঘের দেখা মেলেনি। কিন্তু জোরালো দখিনা বাতাসের দাপটে তাপমাত্রা খুব একটা বাড়তে পারেনি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম।

তবে কলকাতার গা জুড়োতে শুধু ওই ঘূর্ণাবর্তই যথেষ্ট নয়। সন্ধ্যার ঝড়-বৃষ্টির জন্য রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল এবং তার সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড থেকে বয়ে আসা বজ্রগর্ভ মেঘের উপরেও নির্ভর করতে হয় শহরবাসীকে। ঝড়-বৃষ্টি হবে কি না, সেই পূর্বাভাস দিতে তাই পশ্চিমাঞ্চলের মেঘের উপরে নজর রাখতে দুপুর হলেই রেডারে চোখ রেখে বসছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। “রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে এখন বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির পরিস্থিতি রয়েছে। গত তিন দিন পরপর বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরিও হয়েছে”, বলছেন এক আবহবিদ।

অনুকূল পরিস্থিতি থাকার ফলে এ দিন বিকেলেও আসানসোল ও সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের উপরে বিরাট একটি বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। তা দেখেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কালবৈশাখীর সতর্কতা জারি করেছিল আবহাওয়া দফতর। বিজ্ঞানীরা জানান, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হাওড়ার উপর দিয়ে মেঘপুঞ্জটি বয়ে আসে কলকাতার দিকে। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ শহরে শুরু হয় বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া, বিদ্যুতের ঝিলিক। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কলকাতা ছাড়াও শহর লাগোয়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু কিছু এলাকায় ভাল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি মিলেছে হাওড়া ও হুগলির কিছু এলাকাতেও।

এক দিকে ঘূর্ণাবর্ত, অন্য দিকে পশ্চিমাঞ্চলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির পরিস্থিতি দু’য়ে মিলেই লাগাম পড়েছে মহানগরের তাপচিত্রে। ফলে গত দু’দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচেই আছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “সোমবারও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন