সেতুর ভবিতব্যই ভাবাচ্ছে বেশি

কী ভাবে সেতুর একশো মিটার অংশ ভেঙে পড়ল, সেটা অবশ্যই খুঁজে বার করা জরুরি। কিন্তু ওঁদের চোখে তার চেয়েও জরুরি বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ। ওঁরা, মানে আইআইটি খড়্গপুরের তিন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, রাজ্য সরকার যাঁদের সেতু-তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে রেখেছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

কী ভাবে সেতুর একশো মিটার অংশ ভেঙে পড়ল, সেটা অবশ্যই খুঁজে বার করা জরুরি। কিন্তু ওঁদের চোখে তার চেয়েও জরুরি বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ। ওঁরা, মানে আইআইটি খড়্গপুরের তিন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, রাজ্য সরকার যাঁদের সেতু-তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে রেখেছে। সেতু-কাণ্ড নিয়ে তিন জন নিজেদের মধ্যে বেশ ক’বার কথা বলেছেন। উপরন্তু ছাত্র, সহপাঠী, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবদের থেকে অহরহ মতামত পাচ্ছেন ই-মেলে। এতে ওঁদের তথ্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে।

Advertisement

এবং সব দেখে-শুনে তিন ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, সেতুভঙ্গের কারণ অনুসন্ধান ছাপিয়ে এই মুহূর্তে মূল বিচার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রস্তাবিত উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ, কী ভাবে তাকে নিরাপত্তার মজবুত ভিতের উপরে দাঁড় করানো যায়। কিংবা আদৌ যায় কি না।

পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আমরা তিন জনই রোজ গুচ্ছের মেল পাচ্ছি। পাঠাচ্ছে যারা, তারা কেউ আমাদের ছাত্র। কেউ বা সহপাঠী, তিরিশ বছর বাদে যোগাযোগ হল। কারও সঙ্গে হয়তো কখনও কাজ করেছি।’’ পোস্তার ভাঙা সেতুই এত দিন বাদে ওঁদের মধ্যে ফের যোগসূত্র গড়ে তুলেছে। ‘‘নিছক খোশগল্প করতে নয়। মেল প্রেরকেরা সবাই দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আদতে তাঁরা কলকাতার বাসিন্দা। ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিলক্ষণ বিচলিত। এ ব্যাপারে তাঁরা নিজেদের মতামত লিখে পাঠিয়েছেন,’’ বলেন কমিটির ওই সদস্য। এ জন্য কেউ গুগ্‌ল ম্যাপ থেকে দুর্ঘটনার ছবি জোগাড় করেছেন। কেউ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি বা টিভি চ্যানেলের ভিডিও-ফুটেজ দেখে নিজেদের মতো করে বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণ করেছেন।

Advertisement

দেশ-বিদেশ থেকে আসা মেলগুলোর পর্যালোচনা করতে বসে আইআইটি-র তিন ইঞ্জিনিয়ারের পর্যবেক্ষণ: প্রেরকদের সিংহভাগ পথ-সেতুটির ভবিতব্য নিয়েই বেশি চিন্তিত। ‘‘বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভারকে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে নিশ্চিন্তে তুলে দিতে গেলে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মেলগুলোয়। বিদেশে বিভিন্ন সেতুর ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, অনেকে তারও দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন,’’ বলেন তদন্ত কমিটির এক বিশেষজ্ঞ সদস্য। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বেশ বুঝতে পারছি, সেতুর ভবিষ্যতের উপরে আমাদের বেশি জোর দিতে হবে।’’

এ দিকে উড়ালপুল-কাণ্ডের তদন্তে লালবাজার যাদের সাহায্য নিচ্ছে, সেই নির্মাণ বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘রাইটস’ও প্রাথমিক ভাবে মনে করে, নির্মাণ চলাকালীন নক্‌শা বদলানো হয়েছিল। রেলের সহযোগী সংস্থাটির বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নক্‌শা প্রস্তুতকারীদের ডেকে মূল নক্‌শাটি জোগাড় করে নিশ্চিত হওয়া উচিত, তাতে কোনও পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে কি না। হয়ে থাকলে কারণ জানতে হবে। কিন্তু যদি মূল নক্‌শাতেই গলদ থেকে থাকে?

‘‘সে ক্ষেত্রে খতিয়ে দেখতে হবে, কী ভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সেই নক্‌শা অনুমোদন করল।’’— বলছেন এক রাইটস-কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন