প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমোদন ছাড়া তাদের কোনও অফিস বা ক্যাম্পের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও বহুতল নির্মাণ করা যাবে না।
সম্প্রতি কলকাতা পুর প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এ কথা জানিয়েছে প্রতিরক্ষা দফতর। আর তাতেই কপালে হাত পুরসভার। ওই চিঠির সঙ্গে একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ফোর্ট উইলিয়াম, হেস্টিংস ছাড়াও সেনা অফিসারদের বসত এলাকা টার্ফ ভিউ-সহ বালিগঞ্জ, আলিপুর, তারাতলা, গোখেল রোডের মতো জনবহুল এলাকাও রয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই সব এলাকায় সেনা অফিসের ৫০০ মিটারের মধ্যে অনেক বহুতল আছে। তা প্রতিরক্ষা দফতরের অজানাও নয়। তা সত্ত্বেও নতুন করে এই নির্দেশ কেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পুরসভায়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই নির্দেশে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে। পুরসভার রাজস্ব বাবদ আয় কমে যাবে।” পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই যে সব বহুতলের অনুমোদন দেওয়া হয়ে গিয়েছে, সেগুলির কী হবে তা নিয়েও চিন্তিত পুর প্রশাসন। আপাতত সেনা এলাকার জমির ৫০০ মিটারের মধ্যে বহুতল তৈরি নিয়ে বরো ইঞ্জিনিয়ারদের সতর্ক করা হচ্ছে। মেয়র জানান, প্রতিটি বরোয় সার্কুলার পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ আধিকারিক তরুণ সিঙ্গা বলেন, “সেনা দফতরের সুরক্ষার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। শুধু কলকাতা নয়, সারা ভারতেই তা মেনে চলার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। কলকাতা পুরসভা-সহ রাজ্যকেও তা পাঠানো হয়েছে।” সেনা দফতর সূত্রের খবর, দেশের একাধিক স্থানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতেই ওই সার্কুলার মেনে চলায় কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, সেনা দফতরের জমিতে নির্মাণকাজ করা নিয়ে কলকাতা পুর-আইনেও কিছু উপধারা রয়েছে। তবে তা মূলত হেস্টিংস, ফোর্ট উইলিয়াম এলাকা কেন্দ্র করেই। এ বার ওই দু’টি স্থান ছাড়াও বালিগঞ্জ, আলিপুর, গোখেল রোড এবং তারাতলার মতো এলাকা যুক্ত হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে পুর প্রশাসনের। তিনি জানান, এর মধ্যেই ৩-৪টি বহুতল অনুমোদন দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু সেনা দফতরের নির্দেশে তা আপাতত আটকে রাখা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা দফতরের ওই নির্দেশ দেওয়া হয় ২০১১ সালে। তা হলে এত দিন কিছু করা হয়নি কেন?
এ ব্যাপারে পুরসভার এক অফিসার জানান, ২০১১ সালে প্রতিরক্ষা দফতর ওই সার্কুলার পাঠালেও তেমন কিছু হয়নি। তার পরে বেশ কয়েকটি বহুতল অনুমোদনও পেয়েছে। সম্প্রতি হেস্টিংস এলাকায় একটি বহুতল হোটেল তৈরি ঘিরে সমস্যা বাড়ে। ডায়মন্ড হারবার রোডেও লরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেনাবাহিনীর একটি পাঁচিল। সে কারণে সুরক্ষা বলয় বাড়াতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পুরসভার কাছে ফের চিঠি পাঠান সেনাবাহিনীর এক স্টাফ অফিসার (ভূমি)। তাতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর অফিস, বাসস্থান বা ছাউনি এলাকার ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ করতে হলে তাদের অনুমোদন লাগবে। আর, ৫০০ মিটারের মধ্যে চার বা তার বেশি তল নির্মাণ প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমতি ছাড়া করা যাবে না। কলকাতার একটি মানচিত্র দিয়ে কোন কোন এলাকায় সেনা দফতরের জমি রয়েছে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা হাতে পেয়ে আপাতত পুরসভার বিল্ডিং দফতর অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের। মেয়র জানান, ওই ফরমান নিয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানানো হবে।