কেন্দ্রের সুপারিশ মেনে ও যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে মোবাইল-অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সিতে ‘সিসিটিভি’ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। মাসখানেকের মধ্যেই শহরে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে সেই ব্যবস্থা চালুর কথা জানাল উবের।
কলকাতা-সহ দেশের কয়েকটি শহরে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে ভারতে এসেছেন উবের-এর সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মার্কিন প্রবাসী ডরোথি চৌ। সেই সূত্রেই ডরোথি, কলকাতায় সংস্থার প্রধান অশ্বিন ডায়াস প্রমুখ ওই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
দেশের মধ্যে শুধু কলকাতাতেই ট্যাক্সিতে সিসিটিভি লাগানোর কথা জানিয়ে ডরোথি ও অশ্বিনের দাবি, তাঁরা যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে কোনও নিয়মের বিরোধী নন। তবে এটি কতটা বাস্তবসম্মত, সেটাই প্রশ্ন। খরচ ছাড়াও এটি চালানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। যাত্রীর সম্মতিও চাই। এই সব কারণেই গোটা ব্যবস্থা পাকাপাকি শুরুর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে সব কিছু খতিয়ে দেখতে চান তাঁরা।
যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে উবেরের বিরুদ্ধে অনেক শহরেই অভিযোগ উঠেছে। বাদ যায়নি কলকাতাও। এ ধরনের ঘটনা তাঁদের ব্যবসায় কতটা প্রভাব ফেলে, সে প্রশ্নের সরসারি জবাব না দিলেও সংস্থাটির কর্তা জানান, তাঁরা প্রতিনিয়তই শিক্ষা নিচ্ছেন। এবং সব সময়েই সার্বিক ভাবে সুরক্ষাকবচ আরও জোরদার করতে উদ্যোগী। তাঁদের আরও দাবি, সংস্থা সর্বদাই চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কোনও চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত এই শহরে এমন ক’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে তথ্য দিতে রাজি হননি তাঁরা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতে জরুরি প্রয়োজনে মোবাইলে ‘এসওএস’ বার্তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করেছে উবের। তেমনই আমেরিকায় আরও দু’টি পরীক্ষা চালাচ্ছে তারা। ডরোথি জানান, বহু সময়ে চালকেরা অযথা জোরে গাড়ি চালান, বারবার ব্রেক কষেন। এমন অনিয়ম ঘটলে চালককে সতর্ক করতে আমেরিকায় প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি চালাচ্ছে উবের। গাড়ি চালানোর সময়ে চালকের মোবাইল ফোন থেকে কথা বলা তো দূরের কথা, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সেটি সরানোই নিয়মবিরুদ্ধ। তবু অনিয়ম ঘটে বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও মার্কিন
মুলুকে নজরদারি চালাচ্ছে উবের। ভবিষ্যতে ভারতেও তা চালানোর কথা জানান ডরোথি।
এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার সার্বিক পরিবেশ কতটা সুরক্ষিত, তা বুঝতে ভারত-সহ আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কিছু শহরে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিশেষ সমীক্ষা (সেফটি পিন) চালাচ্ছে উবের। কলকাতাতেও তা হবে। সংস্থার কর্তারা জানান, ট্যাক্সির বাইরে লাগানো একটি ‘নাইট ভিশন’ মোবাইলের ক্যামেরার মাধ্যমে মূলত সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার ছবি ও জিপিএস-এর তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এর পর বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকায় আলো কতটা, এলাকার জন ঘনত্ব, সার্বিক নিরাপত্তা, কতটা এলাকা দৃশ্যমান, মহিলা-পুরুষের সংখ্যা, পরিবহণ ব্যবস্থা— সব বিশ্লেষণ করা হবে। সমীক্ষার ফল জানানো হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। যাতে প্রয়োজন হলে এলাকার সার্বিক পরিবেশ উন্নত অর্থাৎ আলো বা পুলিশ পাহারা বাড়ানো যায়।