হাতে বৈধ টিকিট, তবু যাত্রীকে উড়তে দিল না জেট

জেট এয়ারওয়েজের টিকিট কেটেছিলেন ইন্টারনেটে। সেই বৈধ টিকিট নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে ওই সংস্থার কাউন্টারে গিয়ে হতবাক হয়ে গেলেন যাত্রী। জেট অফিসারেরা বলে দিলেন, “আপনাকে উঠতে দেওয়া যাবে না!” “কেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৪:৫৯
Share:

জেট এয়ারওয়েজের টিকিট কেটেছিলেন ইন্টারনেটে। সেই বৈধ টিকিট নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে ওই সংস্থার কাউন্টারে গিয়ে হতবাক হয়ে গেলেন যাত্রী। জেট অফিসারেরা বলে দিলেন, “আপনাকে উঠতে দেওয়া যাবে না!”

Advertisement

“কেন? আমি তো ইন্টারনেট থেকে টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি! নিয়ম অনুযায়ী বিমান ছাড়ার দু’ঘণ্টা আগে পৌঁছে গিয়েছি বিমানবন্দরে। তা হলেও আমাকে উঠতে দেওয়া হবে না কেন,” জানতে চান প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার নীলাম্বর চট্টোপাধ্যায়।

বেহালার যুবক নীলাম্বরবাবু কগনিজেন্টের কর্মী। মার্কিন মুলুকের ডেনভারে কাজ করছেন এক বছর ধরে। কলকাতার বাড়িতে এসেছিলেন ১০ ফেব্রুয়ারি। কর্মস্থলে পৌঁছনোর জন্যই শনিবার, ৮ মার্চ উড়ান ধরতে গিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে জেট এয়ারওয়েজের উড়ানে মুম্বই। সেখান থেকে জেটের উড়ানেই ব্রাসেলস হয়ে নিউ ইয়র্ক। আবার নিউ ইয়র্ক থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়ানে ডেনভার। কিন্তু জেট সংস্থা বিমানে উঠতে না-দেওয়ায় ওই যুবক এখনও কলকাতায়। শনিবার রাতেই তিনি বিমানবন্দর থানায় লিখিত ভাবে বিষয়টি জানান। রবিবার সকালে জেট তাঁর কাছে তিন দিন পরেকার নতুন টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নতুন টিকিটে যে তাঁকে বিমানে উঠতে দেওয়া হবেই, সেই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারছেন না তিনি।

Advertisement

নীলাম্বরবাবু জানান, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শনিবার জেটের মুম্বই উড়ান ছাড়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। বিকেল ৪টে নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে বিমানে উঠতে না-পেরে আতান্তরে পড়ে যান তিনি। জেটের এক মহিলা অফিসার বলেন, “আপনি কাস্টমার কেয়ার (যাত্রী বা ক্রেতা কল্যাণ বিভাগ)-এ ফোন করুন।” নীলাম্বরবাবু বিমানবন্দর থেকেই সেখানে ফোন করেন। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে কাস্টমার কেয়ার অফিসার সব শুনে বলেন, “সে কী! আপনার তো বৈধ টিকিট। কেন আপনাকে বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না? আমাকে জেটের কোনও অফিসারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিন।”

নীলাম্বরবাবু বিমানবন্দরে জেটের মহিলা অফিসারকে ফোনটা ধরতে অনুরোধ করেন। সেই মহিলা অফিসার অনুরোধ মানতে চাননি। তিনি নীলাম্বরবাবুকে বলেন, “আমি আপনার ফোন থেকে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য নই।” নীলাম্বরবাবু বলেন, “তা হলে আপনি নিজেই কাস্টমার কেয়ারে কথা বলুন।” মহিলা অফিসার তাতেও নারাজ। বিপন্ন যাত্রী তখন জানতে চান, “তা হলে আমি কী করব? আমার তো বৈধ টিকিট রয়েছে।”

কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি জেটের অফিসার। ওই যাত্রীকে শুধু বলা হয়, মুম্বই উড়ানের সব টিকিট ‘রি-ইস্যু’ অর্থাৎ নতুন করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর টিকিট ‘রি-ইস্যু’ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কম্পিউটার সেটা নিচ্ছে না। সেই জন্যই নাকি তাঁকে বিমানে উঠতে দেওয়া সম্ভব নয়।

নীলাম্বরবাবুর প্রশ্ন, বিমান সংস্থা নিশ্চয়ই নিজেদের কোনও বড় গোলযোগের জেরে ওই উড়ানের সব টিকিট নতুন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হলে তাঁর টিকিটটা কী দোষ করল? নেটে টিকিট কাটার সময়েই তো তিনি নিজের ই-মেল আইডি এবং মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন। যদি টিকিট নিয়ে সমস্যা হয়ে থাকে বা নতুন করে টিকিট দিতে গিয়েও যদি গোলমাল হয়, তাঁকে আগে থেকে জানানো হল না কেন?

কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি জেট এয়ারওয়েজের লোকজন।

বিমানে উঠতে না-পেরে নীলাম্বরবাবু ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু পরের দিন অর্থাৎ রবিবারেই তাঁর জন্য নতুন চমক অপেক্ষা করছিল। ওই দিন তাঁর ই-মেলে ১১ মার্চ অর্থাৎ মঙ্গলবারের কলকাতা-মুম্বই ও মুম্বই-নিউ ইয়র্ক রুটে জেটেরই উড়ানের টিকিট এবং ১২ মার্চের নিউ ইয়র্ক-ডেনভার রুটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নতুন টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই যাত্রীর প্রশ্ন, শনিবার বিমানে উঠতে না-দিয়ে পরের দিনই তড়িঘড়ি তাঁর ই-মেলে নতুন টিকিট পাঠানো হল কেন? বিমান সংস্থার অব্যবস্থায় তাঁর যে তিন দিন নষ্ট হল, তার ক্ষতিপূরণ হবে কী ভাবে?

নীলাম্বরবাবু এ দিন বলেন, “প্রথমত আমি ডেনভারে পৌঁছব তিন দিন পরে। ওখানে গিয়ে কর্মস্থলে সমস্যায় পড়তে হবে। তা ছাড়া ১১ মার্চও যে আমাকে ওই নতুন টিকিটে কলকাতা থেকে বিমানে উঠতে দেওয়া হবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়?”

এই সব প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি। কী বলছেন জেট-কর্তারা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেট-কর্তা বলেন, “এমনটা তো হওয়া উচিত নয়। আমরা ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সবিস্তার তথ্য নিয়ে তদন্তে নামব। আমাদের কোনও অফিসার দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন