তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূলই। শনিবার ইংরেজবাজার পুরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলারের (বিওসি) মিটিংয়ে কার্নিভাল, পাঁচ মাস পর বিওসি, মিউটেশন প্রভৃতি একাধিক প্রসঙ্গ নিয়ে বোর্ডের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূলেরই কাউন্সিলার তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। পাশাপাশি পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিও একই ইস্যুতে সরব হয়েছেন এ দিন। এমনকী, সিপিএম থেকে তৃণমূলে নাম লেখানো ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বর্ণালী হালদার কুণ্ডুর বিওসিতে উপস্থিতি নিয়েও এদিন সভায় ব্যাপক জলঘোলা হয়। শাসকদলের একাংশ ও কংগ্রেসের তরফে বিওসি সভায় অভিযোগ করা হয় যে ওই কাউন্সিলারের পদ নির্বাচন কমিশন খারিজ করে দিয়েছে, তা সত্বেও তিনি কেন এই সভায়? শেষপর্যন্ত ওই কাউন্সিলারকে সভাকক্ষের বাইরে বসিয়ে সভা হয়েছে। যদিও বোর্ড মিটিংয়ে সুষ্ঠুভাবেই আলোচনা হয়েছে বলে দাবি পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানের।
২০১৭-র ১৮ জানুয়ারি ইংরেজবাজার পুরসভার পুরপ্রধান হন তৃণমূলের অ্যাসোসিয়েট সদস্য নীহাররঞ্জন ঘোষ। পুরসভা সূত্রেই খবর, পুরপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথম বিওসি করেছিলেন প্রায় পাঁচ মাস পর গত ২৪ মে। এরপর ৩০ জুন একটি ও শেষ ৩১ জুলাই পুরসভার বিওসি হয়। প্রায় পাঁচ মাস কাটতে চললেও বিওসি আর না হওয়ায় বিরোধী তো বটেই এমনকি শাসকদলের অন্দরেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এদিন বিওসি হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেশিরভাগ কাউন্সিলারই হাজির ছিলেন। সভার শুরুতেই পাঁচ মাস পর বিওসি ডাকা নিয়ে তোপ দাগেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। এরপর একে একে কার্নিভাল, মিউটেশন প্রসঙ্গতেও সরব হন তিনি। মাঝে তিনি ও কংগ্রেসের নরেন্দ্রনাথবাবু সভায় বর্ণালীদেবীর উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেন। এসব নিয়ে সভায় পাল্টা জবাবও দিয়েছেন পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ ও উপ-পুরপ্রধান দুলাল সরকার।
পরে কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, পুর আইনেই রয়েছে প্রত্যেক মাসে বিওসি করতে হবে। কিন্তু পুরপ্রধান নানা অজুহাত খাঁড়া করে পাঁচ মাস ধরে পুরসভার কোনও বিওসি করেননি। বিওসি হয়নি, কারও সঙ্গে কোনও আলোচনাও নেই অথচ বিওসির অনুমোদন ছাড়া শহরে কার্নিভাল হচ্ছে। বর্ণালীদেবীর কাউন্সিলার পদ নির্বাচন কমিশন খারিজ করেছে অথচ তাঁকে বিওসি সভায় ডেকেছেন পুরপ্রধান। আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে মিউটেশন ফির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসব বোর্ড করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে আদালতে যাব।’’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন মহানন্দা নদী থেকে অবাধে মাটি কেটে শহরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে গিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের মদতে এলাকা ভরাট করা চলছে। পুরসভা নির্বিকার। কংগ্রেসের নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিও অভিযোগ করেন, বর্ণালীদেবীর সভায় থাকার কোনও এক্তিয়ারই নেই। অথচ পুরপ্রধান তাঁকে সভায় ডেকেছেন। পাঁচ মাস ধরে বিওসি নেই, কার্নিভাল চলছে, পরিষেবা মানুষ পাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এদিন বিওসিতে তা জানিয়েছি।’’ উপ-পুরপ্রধান দুলালবাবু বলেন, ‘‘বর্ণালীদেবীর বিষয়টি বিচারাধীন। তবে একাংশ কাউন্সিলার আপত্তি জানানোয় তাঁকে সভাকক্ষের বাইরে বসানো হয়েছে। এদিন শান্তিপূর্ণভাবে সভা হয়েছে।’’
পুরপ্রধান নীহারবাবু বলেন, ‘‘বিওসি কেন করা যায়নি তা আমরা কাউন্সিলারদের চিঠি দিয়েই জানিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরও প্রশ্ন তোলা অবান্তর। তবে কার্নিভালের সমস্ত খরচের হিসেব আমরা জানিয়ে দেব। সমস্ত নিয়ম মেনেই পুরসভায় কাজ চলছে।’’ বর্ণালীদেবীর ফোন সুইচড অফ থাকায় তার কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। মাটি ভরাটে মদত দেওয়া নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী অভিযোগ
অস্বীকার করেন।