বিচার ভবনে সুদীপ্ত সেন। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
আত্মহত্যার চেষ্টার পরে জেলে ফিরে ফের কারাকর্তাদের বিপাকে ফেললেন কুণাল ঘোষ। সোমবার সকাল থেকে জেলের মধ্যেই অনশনে বসলেন তিনি। এ বার কুণালের দাবি, তাঁর আত্মহত্যার চেষ্টার পরে যে সব কারা-অফিসার, চিকিৎসক ও কর্মীদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁদের পুনরায় কাজে বহাল করতে হবে।
হাসপাতাল থেকে ফিরেই কুণাল এ ভাবে আচমকা অনশন শুরু করায় ফাঁপরে পড়েছেন প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। জেল সূত্রের খবর, রবিবার রাতে হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে কুণাল একটি রুটি ও তরকারি খেয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন সকালে জলখাবার খেতে চাননি তিনি। এক কারা-কর্তা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, ওঁর বোধহয় খাওয়ার ইচ্ছে নেই। তার পরে সকাল দশটায় ওঁকে সিবিআই আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিরে আসার পরেও কিছু খেতে চাননি এবং তখনই জানান, অনশন শুরু করেছেন তিনি!” কুণালকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ওই কারা-কর্তার বক্তব্য, “ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বেশি কিছু বলাও যাচ্ছে না। আবার উনি যদি কিছু করে বসেন!”
কুণাল অনশনে বসার আগে থেকেই অবশ্য এ দিন কারা দফতরের অন্দরেও সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের কাজে ফেরানোর দাবি তীব্র হয়েছে। এ দিন কারাকর্মীদের দু’টি বিরোধী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ কারারক্ষী সমিতি এবং কারারক্ষী সমিতি পশ্চিমবঙ্গের তরফে প্রেসিডেন্সি জেলের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পশ্চিমবঙ্গ কারারক্ষী সমিতির নেতা গোপাল সরকার বলেন, “আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই অন্যায় ভাবে কর্মীদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।” সন্ধ্যায় কুণালও একই দাবিতে অনশন শুরু করলেও এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি ওই নেতারা। এক কারারক্ষীর কথায়, “আমাদের সঙ্গে কুণালের কোনও সম্পর্ক নেই। ওঁর জন্য জেলকর্মীদের অযথা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে বুঝেই উনি অনশনের নাটক শুরু করেছেন!”
অনশন শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত কুণালের শারীরিক অবস্থা মোটের উপর স্বাভাবিক আছে বলেই জেল সূত্রের খবর। রবিবার এসএসকেএম থেকে ছাড়ার সময়ে কুণালকে একটি হজমের ওষুধ, একটি অ্যান্টিবায়োটিক ও একটি মাল্টি-ভিটামিন ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এ দিন সকালেও কুণালের রক্তচাপ-সহ একাধিক পরীক্ষা করেন জেলের চিকিৎসক জহর দত্তচৌধুরী। তিনি কারা দফতরকে জানান, কুণালের রক্তচাপ ও অন্যান্য মাপকাঠি স্বাভাবিক।
বিচার ভবনে সুদীপ্ত সেন। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসিডেন্সি জেলে নিজের সেলেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল। শুক্রবার ভোর রাতে তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে ফেরেন কুণাল। তার আগেই অবশ্য তাঁর নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে তাঁর সেলে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে কুণালের সেলও পরিবর্তন করেছেন জেল কর্তৃপক্ষ। কারা দফতর ঠিক করেছে, এ বার থেকে দিনে তিন বার করে কুণালের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেই মতো এ দিনও তিন বার তাঁর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন জেল-ডাক্তার।
এ দিনই আবার সিবিআই আদালতের বিচারকের কাছে গিয়ে কুণাল অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে জেলে ফেরার পরে তাঁর সেল থেকে দু’টি ডায়েরি, দু’টি খাতা এবং শীতবস্ত্র উধাও হয়ে গিয়েছে। কুণালের দাবি, হারিয়ে যাওয়া দু’টি ডায়েরিতে তিনি গত এক বছর ধরে আত্মজীবনী লিখছিলেন। অভিযোগ শোনার পরে বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলের ভারপ্রাপ্ত সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র। জেল সূত্রে খবর, প্রেসিডেন্সি জেলে কুণালের সেল ২০ নম্বর থেকে সরিয়ে ৯ নম্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে সময়েই কিছু খাতা, ডায়েরি কুণালের সেল থেকে সরিয়ে জেলের সুপারের কাছে রাখা হয়। এখনও সেগুলি সুপারের কাছেই আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে তা কুণালকে ফেরত দেওয়া হবে।