অসুস্থ কুণালকে পিজি-তে নিতে মানা নবান্নের

অসুস্থ কুণাল ঘোষের চিকিৎসা, নাকি সাংবাদিকদের কাছে তাঁর মুখ খোলা ঠেকানো কোনটা বেশি জরুরি, তা নিয়েই শনিবার দিনভর টানাপড়েন চলল, নবান্ন, প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ও এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে। দিনের শেষে দেওয়া হলো লাঠি বাঁচিয়েই সাপ মারার বার্তা! প্রশাসন সূত্রের খবর, টানা প্রায় ২২ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়ায় এ দিন সকালে কুণালকে পিজি-তে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। গাড়িতে তোলার জন্য তাঁকে জেলের গেট পর্যন্ত আনাও হয়। কিন্তু নবান্ন থেকে একটি ফোন পেয়ে সে চেষ্টায় ক্ষান্ত হন জেল কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় টানাপড়েন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share:

এসএসকেএম-এ ভর্তি সৃঞ্জয় বসু। ছবি:রণজিৎ নন্দী।

অসুস্থ কুণাল ঘোষের চিকিৎসা, নাকি সাংবাদিকদের কাছে তাঁর মুখ খোলা ঠেকানো কোনটা বেশি জরুরি, তা নিয়েই শনিবার দিনভর টানাপড়েন চলল, নবান্ন, প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ও এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে। দিনের শেষে দেওয়া হলো লাঠি বাঁচিয়েই সাপ মারার বার্তা!

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, টানা প্রায় ২২ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়ায় এ দিন সকালে কুণালকে পিজি-তে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। গাড়িতে তোলার জন্য তাঁকে জেলের গেট পর্যন্ত আনাও হয়। কিন্তু নবান্ন থেকে একটি ফোন পেয়ে সে চেষ্টায় ক্ষান্ত হন জেল কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় টানাপড়েন।

শেষে রাত ১০টা নাগাদ এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র জানান, নির্মলেন্দু সরকারের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল কুণালকে দেখেছেন। তাঁর গুরুতর কোনও সমস্যা নেই। শরীরে জলের অভাব হয়েছিল। তাই স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁকে পিজি-তে ভর্তি করার সম্ভাবনা নেই। কুণালকে পিজি-তে নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে রাত পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মা। পরে তিনিও জানান, এ দিন রাতে কোথাও নেওয়া হবে না তাঁকে।

Advertisement

কিন্তু যে রোগীর এত ক্ষণ প্রস্রাব বন্ধ ছিল, যাঁর অবস্থার অবনতি হচ্ছিল বলে পিজি-তে ভর্তির তোড়জোড় করা হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত তা থমকে গেল কেন? পিজি-তে যে পরিষেবা তিনি পেতেন, তা কি জেল হাসপাতালে তিনি পাবেন?

প্রশ্ন উঠছে, নবান্ন থেকে আসা ফোন নিয়েও। জেলের এক মুখপাত্র জানান, ফোনটি এসেছিল মুখ্যসচিবের অফিস থেকে। বলা হয়, কুণালকে যেন এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা না হয়। পুলিশ ভ্যান বা অ্যাম্বুল্যান্সে যাতায়াতের পথে সাংবাদিকদের সামনে সরকার-বিরোধী বক্তব্য পেশ করতে পারেন কুণাল এই আশঙ্কায় নবান্নের কর্তারা জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, দরকারে পিজি-র চিকিৎসকদের পাঠিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করা হোক। অথচ ওই ফোন যখন আসে, তখনও পর্যন্ত কিন্তু জেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা মনে করছিলেন কুণালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি-তে নেওয়াটা জরুরি।

শেষে বহাল থাকে নবান্নের নির্দেশই। বিকেলে পিজি থেকে চিকিৎসকেরা গিয়ে তাঁকে দেখে আসেন। অভিযোগ, ডাক্তারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সহযোগিতা করেননি কুণাল। পিজি থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের এক জন সন্ধেয় জানান, কুণালের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করানোই উচিত বলে তিনি মনে করছেন। রাত একটু বাড়তেই উল্টো কথা জানান পিজি-র অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র। বলেন, “ওঁর বিশেষ চিকিৎসার দরকার নেই। ডিহাইড্রেশনের জন্য স্যালাইনটুকু দিলেই হবে। পিজি-তে ভর্তি করে একটি শয্যা আটকে রাখা অর্থহীন। অন্য গুরুতর অসুস্থের তা দরকার হতে পারে। স্যালাইন জেল হাসপাতালেই দেওয়া যায়।”

সারদা-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই সাংসদ সম্প্রতি জেলে অনশন শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় জেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও তিনি কিছু খাননি। কারা-কর্তারা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি ওই সাংসদ। জল খাচ্ছিলেন অত্যন্ত কম। প্রায় ২১-২২ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়ায় রক্তচাপ কমে হয় ১০৮/৮০। চিকিৎসকেরা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে তিনি অনিদ্রা ও মানসিক চাপে ভুগছেন। ফলে সব মিলিয়ে তাঁর অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

পিজি-র অধ্যক্ষ জানান, বেলা ১১টা নাগাদ পুলিশের তরফে ফোন করে তাঁকে জানানো হয়, কুণালকে ভর্তি করতে আনা হচ্ছে। যেন আলাদা কেবিনের ব্যবস্থা হয়। সাড়ে ১২টা নাগাদ ফের ফোন করে পুলিশ জানায়, কুণাল আসছেন না। জেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা এর পর ফোন করে পিজি-র চিকিৎসকদের দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানান। প্রদীপ মিত্রের কথায়, “বন্দি সাংসদ আগে পিজি-তে ভর্তি থাকাকালীন মেডিক্যাল বোর্ডের যে ডাক্তাররা তাঁকে দেখতেন, তাঁদেরই পাঠানোর জন্য জেল হাসপাতাল থেকে অনুরোধ এসেছিল। কিন্তু এ দিন দুপুরে তাঁদের কেউ ছিলেন না। কেউ কেউ কলকাতাতেই নেই। ফলে আইটিইউ-র ইনচার্জ রজত চৌধুরী ও কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে সাড়ে চারটে নাগাদ জেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সাড়ে ছ’টা নাগাদ মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার নির্মলেন্দু সরকার গিয়ে কুণালবাবুকে দেখে আসেন।”

কেমন আছেন কুণাল?

জেল হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক রাতে জানান, সকালের তুলনায় তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। প্রস্রাবও হয়েছে। জেলের অন্য এক সূত্রে খবর, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছেন না কুণাল, দুর্বলতার কারণে ঠিক মতো হাঁটতেও পারছেন না।

পিজে-তে বেশ কিছু দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন সারদা-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের আর এক সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার তাঁর শিরদাঁড়া ও ঘাড়ে ব্যথা বাড়ে। মাথা ঘুরছে বলেও জানান তিনি। বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি-তে তাঁর এমআরআই করানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন