সিকিমে ধস, আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস

সমতলের পরে টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টির প্রভাব পড়ল উত্তরের পাহাড়েও। শুক্রবার সকাল থেকেই দার্জিলিং, সিকিমে যাতায়াতের কয়েকটি রাস্তায় পাহাড়ের উপর থেকে ঝুরঝুর করে পাথর গড়িয়ে পড়তে থাকে। বেলা ৯টা নাগাদ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে কালিম্পঙের পথে ভোটেবীর এলাকায় ধস নামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৯:২৩
Share:

প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ধস সিকিমের পাহাড়ে। ছবি: রবিন রাই।

সমতলের পরে টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টির প্রভাব পড়ল উত্তরের পাহাড়েও। শুক্রবার সকাল থেকেই দার্জিলিং, সিকিমে যাতায়াতের কয়েকটি রাস্তায় পাহাড়ের উপর থেকে ঝুরঝুর করে পাথর গড়িয়ে পড়তে থাকে। বেলা ৯টা নাগাদ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে কালিম্পঙের পথে ভোটেবীর এলাকায় ধস নামে। পূর্ত দফতরের কর্মীরা গিয়ে ধস সরাতে প্রায় ২ ঘণ্টা গড়িয়ে যায়। বেলা ২টো নাগাদ ফের ধস নামে ওই জাতীয় সড়কের শ্বেতীঝোরায়। ফলে, ফের সিকিমের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ধস সারানো হলে বিকেলের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেছেন, ‘‘ধস নামায় দু-দফায় সিকিম-কালিম্পঙে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে টানা বৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কা বাড়তে থাকায় ধসপ্রবণ এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা টিম তৈরি রেখেছে জেলা প্রশাসন।’’ কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘আগামী ৪৮ ঘণ্টাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।’’

Advertisement

লাগাতার বৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলে উপচে পড়ছে তিস্তা, তোর্সা সহ একাধিক নদীতে। তীব্র স্রোতে ফাটল তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সেবক করোনেশন সেতুতেও। ইতিমধ্যে জলের ধাক্কায় নড়বড়ে হয়ে পড়েছে সেবকের রেল সেতুর একটি স্তম্ভ। বৃষ্টি চলতেই থাকায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার সকালে সেবক সেতু পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিধানসভা অধিবেশন ছেড়ে সৌরভবাবু এ দিন সকালে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছন। ধসের খবর পেয়ে সিকিমের রাস্তার খোঁজ নেন তিনি।

গত সোম-মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টির পরে জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার-কোচবিহারে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বাড়তে শুরু করেছিল নদীর জল। বুধ এবং বৃহস্পতিবার তুলনামূলক কম বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। তবে বৃহস্পতিবারের রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টির জেরে একরাতেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। তিস্তা-তোর্সা-জলঢাকা বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে। বৃষ্টির ধাক্কায় পাহাড় থেকে পাথর পড়ে ধস নামতেও শুরু করেছে। এ দিন ভোরে সেবকের পাহাড় থেকেও ঝুরঝুর করে পাথর পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সিকিমেও বৃষ্টি চলতে থাকায় ফের রেল চলাচল বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

গত তিন দিন ধরে ক্রমাগত তিস্তার জলস্রোত ধাক্কা মারছে সেবক রেল সেতুর স্তম্ভে। বড় বোল্ডারও ভেসে যাচ্ছে জলের তোড়ে, করোনেশন সেতুতেও ফাটলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সৌরভবাবু জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেবকের পরিস্থিতি দেখতে যাবেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় শিলিগুড়িতেও রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। সেচ দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শিলিগুড়িতে। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার জল বাড়তে থাকায় ময়নাগুড়ির বাসুসুবা এলাকায় নদীর পাড় ভেঙেছে। মালবাজার এবং ক্রান্তি এলাকায় তিস্তার জল ঢুকতে শুরু করেছে। জলবন্দি হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ির শহরের বিভিন্ন এলাকা। কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহারে গড়ে ১৫০ আলিপুরদুয়ারে ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন