সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। রাজ্যের আইনমন্ত্রীর পদে থেকে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সেই তদন্তের বিরোধিতায় মিছিলে হাঁটলেন কী করে, এই প্রশ্ন তুলে সরগরম হয়ে উঠল বিধানসভা।
বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার দফতরের বাজেট-বিতর্কে যোগ দিয়ে আইমন্ত্রীর উদ্দেশে সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘আমার কথায় রাগ করবেন না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়ে আপনি আইন মন্ত্রী হয়েছেন। রাজ্যের আইন ও বিচার ব্যবস্থা দেখার ভার আপনার। কিন্তু সেই আপনিই আদালতের নির্দেশে চলা একটি তদন্তের বিরোধিতা করে মিছিল করলেন, রাস্তায় নামলেন!’’ সুশান্তবাবুর প্রশ্ন, এটা কি শোভন হল? এর ফলে কি জনমানসে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হল না?
জবাবি বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি। আবার রাজনৈতিক কর্মীও। তাই আমার একাধিক পরিচয় রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার যে-পরিচয় এবং যে-ভূমিকা, তার সঙ্গে মন্ত্রীর কাজের মধ্যে
কোনও স্ববিরোধিতা নেই। রাজনীতি করেই আমি মন্ত্রী হয়েছি। ফলে রাজনৈতিক আন্দোলন করার অধিকার আছে আমার। সেই কারণে সচেতন ভাবেই মিছিলে হেঁটেছি। দল বললে আবার হাঁটব।’’ এখানেই থামেননি চন্দ্রিমাদেবী। সুশান্তবাবুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনিও আমার উপরে রাগ করবে না। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার নানা ধকল সামলে আপনিও কিন্তু এখনে বসে আছেন।’’ মন্ত্রীর কথায়, ওই মিছিলে হাঁটার জন্য মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার উপাধ্যক্ষা, বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন এবং তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। আদালত তা খারিজ করে দিয়েছিল। কারণ, প্রতিবাদ করার অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি সর্বোচ্চ আদালত।
বাজেট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো অভিযোগ করেন, আদালতে সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী (এপিপি এবং এজিপি) নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, সাত বছরের ওকালতির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বয়স হতে হবে ৬০ বছরের মধ্যে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। তাঁর দাবি, অযোগ্য লোকেদের দিয়ে কাজ চালানোয় বেশির ভাগ মামলায় হেরে যাচ্ছে সরকার।
আইনমন্ত্রী তখন বলেন, ‘‘কোনও সরকারি আইনজীবীই মামলায় হারতে চান না। কারণ, তাঁরা পেশাদার।’’ তাঁর দাবি, সরকারি আইনজীবীরা সকলেই যোগ্য। বিভিন্ন আদালতে বসার জায়গা, পানীয় জল, শৌচাগারের অভাব নিয়ে অভিযোগ করেন কংগ্রেস বিধায়ক। মন্ত্রী তার বিরোধিতা করে দাবি করেন, বাম আমলে এই ধরনের পরিকাঠামো উন্নয়নে কোনও নজর দেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার সেই কাজ করেছে।
আলোচনায় জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ তৈরির প্রসঙ্গ ওঠায় চন্দ্রিমাদেবী জানান, এতে সরকারের কিছু করার নেই। বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট যেমন যেমন বলেছে, তা মেনে চলতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের হাত-পা বাঁধা। কেন সার্কিট বেঞ্চ হচ্ছে না, তা নিয়ে সকলেরই সরব হওয়া উচিত। মন্ত্রীর দাবি, যখন সার্কিট বেঞ্চ গড়ার সিদ্ধান্ত হয়, সেই সময় খরচ ধরা হয়েছিল ৫৮ কোটি টাকা। এখন সেই খরচ বেড়ে হয়েছে ২৯৭ কোটি।