কাজ বন্ধ ১৪ই পর্যন্ত, নাকাল বিচারপ্রার্থীরা

গত ২৪ এপ্রিল গাড়ি রাখা নিয়ে হাওড়া আদালতের আইনজীবী এবং হাওড়া পুরসভার কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় এবং লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০১:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

সারা রাজ্যের বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির শেষ দেখা যাচ্ছে না। কেননা আইনজীবীদের কর্মবিরতির জেরে আদালতের অচলাবস্থা কাটেনি শুক্রবারেও। হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ দিন পর্যন্ত প্রশাসন কোনও রকম আইনি ব্যবস্থা না-নেওয়ায় বিভিন্ন আদালতে কাজ বন্ধ রাখার মেয়াদ ১৪ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে রাজ্য বার কাউন্সিল। এ দিন কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১৪ মে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।

Advertisement

গত ২৪ এপ্রিল গাড়ি রাখা নিয়ে হাওড়া আদালতের আইনজীবী এবং হাওড়া পুরসভার কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় এবং লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ। হাওড়া আদালতে সে-দিন কাজ হয়নি। আইনজীবীদের উপরে লাঠি চালানোর প্রতিবাদে ২৫ এপ্রিল থেকে সারা রাজ্যের আদালতে কাজ বন্ধ করে দেয় কাউন্সিল। আইনজীবীরা কাজ না-করায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী। তাঁদের বক্তব্য, ওই ঘটনায় হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে-মামলা করেছে, তাতে তো আইনজীবীরা নিয়মিত সওয়াল করছেন। তা হলে অন্যান্য মামলায় কাজ করছেন না কেন? আইনজীবীরা যদি কাজ বন্ধ রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা হলে ওই মামলায় সওয়াল করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।

বার কাউন্সিলের এক কর্তা জানান, ২৫ এপ্রিল কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েই সর্বসম্মতিতে ঠিক হয়, হাইকোর্টের দায়ের করা মামলায় আইনজীবীদের সওয়াল করতে বাধা থাকবে না। কারণ, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে। কারা মামলায় যুক্ত থাকবে, তা-ও ঠিক করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ওই কর্তা আরও জানান, তা ছাড়া আইনজীবীদের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের উপরে ডিভিশন বেঞ্চ কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাওড়ার ঘটনায় হাইকোর্টের মামলার শুনানি ছিল এ দিন। লাঠি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের কাছে মামলার নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রিকে নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ১৩ মে, পরবর্তী শুনানির দিন ওই সব অফিসার বা তাঁদের প্রতিনিধিদের হাজির হয়ে বক্তব্য পেশ করতে হবে। ওই অফিসারদের মামলায় যুক্ত করার জন্য পৃথক একটি আবেদন করেছিল হাওড়া বার অ্যাসোসিয়েশন। তার শুনানিতে ওই নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

হাওড়া আদালতের অচলাবস্থা কাটাতে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টেরই পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে যে-প্রশাসনিক কমিটি গড়ে দিয়েছেন, এ দিন বার কাউন্সিলের কয়েক জন কর্তা সেই কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিচারপতিরা কাউন্সিলের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের ভিতরে ঢুকে পুলিশের ওই ভাবে লাঠি চালানো যে ঠিক হয়নি, সেটা তাঁরা মানছেন। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, তা নিশ্চিত করারও চেষ্টা হবে। কিন্তু তার আগে আদালতের অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হতে হবে কাউন্সিলকে।

হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের একাংশ এ দিন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার যে-হলফনামা পেশ করেছেন, তাতে জানানো হয়েছে, পুলিশ মৃদু লাঠি চালিয়েছে। কিন্তু পুলিশ ২৪ এপ্রিল আসলে কী করেছিল, ছবি-সহ পাল্টা হলফনামায় তা জানানো হয়েছে। পুলিশ কমিশনার হলফনামায় বলেছেন, সে-দিন দু’রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছিল। আইনজীবীরা জানান, ফাটানো হয় পাঁচ রাউন্ড শেল। পাল্টা হলফনামায় প্রমাণও দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন