Left leaders at Congress office

ভোট বড় বালাই, বিধান রায়ই পথ, বললেন সোমেন, মানলেন সুজন

বাম-কং হাত মিলিয়ে চলবে এবং রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে বিধান রায়ের দেখানো পথে চলবে— সোমেনের বক্তব্যের সারকথা এ দিন ছিল এ রকমই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ২০:৩০
Share:

বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত বিধান স্মরণ। নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেস তাঁকে বলে ‘বাংলার রূপকার’। দশকের পর দশক ধরে বামেরা কখনও স্বীকৃতি দেয়নি সে তকমাকে। বরং ‘রূপকার’ তকমা বিধানচন্দ্র রায়ের চেয়ে জ্যোতি বসুর জন্য বেশি প্রযোজ্য— এমন এক তত্ত্বকে নানা ভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু অস্তিত্বের লড়াই বড় বালাই। অতএব পরম্পরা ভেঙে বিধান জয়ন্তীতে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে আমন্ত্রণ জানানো হল বামফ্রন্ট নেতৃত্বকে। বামেরাও অবস্থান থেকে সরে এসে মাইক ফুঁকে স্বীকার করলেন, রাজ্যের স্বার্থই অগ্রাধিকার ছিল বিধান রায়ের কাছে।

Advertisement

চিকিৎসক দিবসে প্রতি বছরই বিধান স্মরণের আয়োজন হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের দফতরে। কংগ্রেসের ব্যানারে নয়, সোমেন মিত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ব্যানারে এই অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু আয়োজনটা হয় কংগ্রেস দফতরের সামনেই আর সে আয়োজনে বামেরা বরাবর ব্রাত্যই থাকেন। সোমেন মিত্র যখন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ এবং তাঁর স্ত্রী শিখা মিত্র যখন চৌরঙ্গীর তৃণমূল বিধায়ক, তখনও প্রদেশ কংগ্রেস দফতর চত্বরের এই অনুষ্ঠানে সোমেন-শিখার পদার্পণ ঘটেছে। অর্থাৎ কংগ্রেস-তৃণমূলে ভেদাভেদ সে ভাবে করেনি বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। কিন্তু বামেদের নিয়ে ছুৎমার্গ ছিলই। রাজ্যের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই সম্ভবত সে সব ধুয়েমুছে গেল এ বার। সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যদের কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে বুধবার সকালে বিধানমূর্তিতে শ্রদ্ধা জানালেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই-এর স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, হাফিজ আলি সৈরানি বা আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্যরা। এই প্রথম বার।

গত বছর চারেক ধরে এ রাজ্যে পরস্পরের কাছাকাছি রয়েছে বাম-কংগ্রেস। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা। পরাজয়ের ধাক্কা খেয়ে সাময়িক বিরতি সমঝোতায়। বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসে জোট সম্ভব কি না, তা নিয়ে নানা তাত্ত্বিক তর্ক। কিন্তু ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের অনেক এলাকাতেই নেতৃত্বকে অগ্রাহ্য করে কর্মীদের মধ্যে বোঝাপড়া। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জোট হতে গিয়েও না হওয়া। নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়ে যাওয়া। তার পরে ফের বাম-কংগ্রেসে সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা শুরু হওয়া। এ ভাবেই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের বছর খানেক বাকি থাকতে ফের কাছাকাছি এসেছে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট। জোট গড়েই যে লড়া দরকার, তা নিয়ে প্রাথমিক ঐকমত্যও হয়ে গিয়েছে। বুধবার বিধান স্মরণে সেই বন্ধুত্বের আবহ আরও জমজমাট হল।

Advertisement

আরও পডু়ন: ১ অগস্টের মধ্যে সরকারি বাংলো ছাড়তে নির্দেশ প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে

বিধানসভার বাম পরিষদীয় নেতা তথা যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীকে এ দিন বিধান রায়ের প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছে। নিয়মভঙ্গ রুখতে প্রথমে নীতি-আদর্শের বুড়ি ছুঁয়ে নেন তিনি। বিধানচন্দ্র রায়ের রাজনীতির সঙ্গে বামেদের রাজনীতির যে ফারাক ছিল, সে কথা আলতো করে উল্লেখ করে দেন। কিন্তু বিধানচন্দ্র রায় রাজ্যের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই যে কাজ করতেন, সে কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই বলে সুজন মন্তব্য করেন। বামেরা যে ভাবে এক সময়ে কেন্দ্রের মাশুল সমীকরণ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছিল, ঠিক সে ভাবেই বিধানচন্দ্র রায়ও শিল্প সংক্রান্ত কর কাঠামো নিয়ে নেহরুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন— বিশ্লেষণ সুজনের।

আরও পডু়ন: অধিগ্রহণের হুঁশিয়ারিতে ফিরল ‘হুঁশ’,পথে নামবে আরও বেসরকারি বাস

এ দিনের বিধান স্মরণে শেষ বক্তা ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রই। বাম-কংগ্রেসের যৌথ লড়াইয়ের পক্ষে তিনি সওয়াল তো করেনই। বিধানচন্দ্র রায়ের দেখানো পথেই যে চলতে হবে, সে কথাও একাধিক বার বলেন। অর্থাৎ বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস হাত মিলিয়ে চলবে এবং রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে বিধান রায়ের দেখানো পথে চলবে— সোমেনের বক্তব্যের সারকথা এ দিন ছিল এ রকমই। সুজনরা পাশে বসে সে কথা শুনেছেন তো বটেই। প্রকারান্তরে মেনেও নিয়েছেন সে সব।

বিধান স্মরণে বক্তা তখন সুজন চক্রবর্তী, শ্রোতা সোমেন মিত্র। নিজস্ব চিত্র।

সময় মতো নির্বাচন বলে ভোট এখনও অন্তত ৮-৯ মাস দূরে। এতটা আগে থেকেই যদি পরস্পরের কাছাকাছি থাকতে পারে বাম-কংগ্রেস, তা হলে সমঝোতায় পৌঁছনো হয়তো সহজ হবে। হয়তো নীচের তলার কর্মীদের মধ্যেও বোঝাপড়া বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত অনেক বিষয়ে ঢোক গিলে নিচ্ছেন দুই শিবিরের নেতারা, সামলে নিচ্ছেন অনেক হেঁচকি। আর তার সুবাদেই বিধান স্মরণের মঞ্চেও প্রথম বার কংগ্রেসের পাশে দেখা গিয়েছে বামেদের, বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। প্রদেশ কংগ্রেসের এক চেনা মুখ মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘ইউপিএ জমানার কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম (অভিন্য ন্যূনতম কর্মসূচি) মনে নেই? এটাও অনেকটা তেমনই। বিরোধ যে সব বিষয়ে রয়েছে, সে সব নিয়ে আপাতত কথা বলে লাভ নেই। আপাতত শুধু মিলগুলো খুঁজে খুঁজে বার করতে হবে। আর যাবতীয় কথা শুধু সেই প্রসঙ্গেই চালাতে হবে, অন্য কোনও প্রসঙ্গে নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন