বাম-বিক্ষোভ জমল না শাসক দলের দাপটে

শাসক দলের পরিকল্পনা ছিল, কোনও মতেই বাম কাউন্সিলরদের মেয়রের ঘরের কাছাকাছি যেতে দেওয়া হবে না। বাস্তবে হলও তাই। তৃণমূল কাউন্সিলরদের ব্যূহ ভেদ করে তারা যে ঢুকতে পারবে না, পুরভবনে পৌঁছেই তা আঁচ করে বামেরা। অগত্যা বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পুরভবনের করিডরেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। সেখানে পাল্টা স্লোগান শুরু করেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

সরব: পুরসভার করিডরে বিরোধী কাউন্সিলরদের হট্টগোল। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

নারদ-কাণ্ডে মেয়রের ঘরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল বামেরা। কিন্তু তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা।

Advertisement

বুধবার শাসক বনাম বিরোধী বাম কাউন্সিলরদের বিক্ষোভ ও হট্টগোলে উত্তেজনা ছড়ায় পুরভবনে। বামেদের হাতে থাকা ফেস্টুন কেড়ে নেন তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা। করিডরে বাম কাউন্সিলরদের বিক্ষোভে রুখে দাঁড়ান তাঁরা। যুযুধান পরিস্থিতি হতেই এক সময়ে সরে যায় বামেরা। ঘটনার পরে বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের রত্না রায়মজুমদার বলেন, ‘‘ক্ষমতার জোরে ওরা আমাদের আন্দোলন বন্ধ করছে। ফেস্টুন কেড়ে নিচ্ছে। কতটা স্বৈরাচারী, এ সব তারই নমুনা।’’ যদিও ওই অভিযোগকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনীতির খেলায় এ সব তামাসা হয়েই থাকে।’’

নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত মেয়র এবং ডেপুটি মেয়রকে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি এবং সিবিআিই। সেই বিষয় তুলে পুরসভার ওই দুই পদাধিকারীর পদত্যাগের দাবিতে এ দিন বেলা ১২টায় মেয়রের ঘরের সামনে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বাম কাউন্সিলরেরা। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে তা জানতে পেরে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই রাতেই সব কাউন্সলিরের কাছে নির্দেশ যায়, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে পুরসভায় হাজির হতে হবে। তাঁদের এ-ও বলা হয়, মেয়রের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখাবে বামেরা। তা রুখতে হবে। নির্দেশ মতো এ দিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যান তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। মেয়র শোভনবাবু ঢোকার আগেই তারকেশ্বর চক্রবর্তী, সুশান্ত ঘোষ, অসীম বসু, রত্না শূর, অরূপ চক্রবর্তী, সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়, স্বপ্না দাসেরা তাঁর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তৈরি ছিল পুলিশবাহিনীও।

Advertisement

শাসক দলের পরিকল্পনা ছিল, কোনও মতেই বাম কাউন্সিলরদের মেয়রের ঘরের কাছাকাছি যেতে দেওয়া হবে না। বাস্তবে হলও তাই। তৃণমূল কাউন্সিলরদের ব্যূহ ভেদ করে তারা যে ঢুকতে পারবে না, পুরভবনে পৌঁছেই তা আঁচ করে বামেরা। অগত্যা বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পুরভবনের করিডরেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। সেখানে পাল্টা স্লোগান শুরু করেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরাও। মুখোমুখি দুই দলের স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

এ দিকে, মেয়রের ঘরের দিকে যেতে না পেরে চেয়ারপার্সন মালা রায়ের ঘরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে বামেরা। তাদের হাতে ছিল মেয়রের পদত্যাগের দাবি তোলা ফেস্টুনও। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানেও পৌঁছে যান শাসক দলের কাউন্সিলরেরা। কয়েক সেকেন্ড দু’পক্ষই সরব ছিল স্লোগানে। হঠাৎই ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান, তৃণমূলের তপন দাশগুপ্ত বামেদের হাতে থাকা মেয়র-বিরোধী ফেস্টুন কেড়ে নেন। ফের একদফা হইচই। সেই স্থান ছেড়ে চলে যায় বামেরা। পরে তৃণমূলের এমন আচরণের বিরোধিতা করেন বাম কাউন্সিলরেরা। পাল্টা বক্তব্যে তৃণমূলের ৮ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতার উন্নয়ন ওঁরা চান না বলেই এ সব করে বাজার গরম করতে চাইছেন।’’

এ দিন ছিল পুরসভার মাসিক অধিবেশন। তৃণমূলের প্রতিরোধে বাইরে তেমন সুবিধা না করতে পেরে অধিবেশন-কক্ষে ফের ফেস্টুন নিয়ে ঢোকে বামেরা। চেয়ারপার্সন মালাদেবী তা সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বামেরা নাছোড়বান্দা। এর পরেই ফের তৃণমূল কাউন্সিলর সাধনা বসু ছুটে গিয়ে বামেদের বেঞ্চ থেকে ওই ফেস্টুন খুলে নেন। ফের শুরু হয় হইচই। তবে শাসক দলের তীব্র চিৎকারে চাপা পড়ে যায় বিরোধীদের কণ্ঠস্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন