Supreme Court of India

‘দায়ী বিচারব্যবস্থাও’! কলকাতা হাই কোর্টের সেই ‘যৌন সংযম’ মামলায় ‘নিগৃহীতা’র বয়ান শুনে পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

উচ্চ আদালতের ওই পর্যবেক্ষণের পরেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। হাই কোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ১৯:২৮
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অপরাধের কারণে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়নি কিশোরী। সে ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল ঘটনাপরম্পরায়। সমাজ, পুলিশ, বিচারব্যবস্থার চোখরাঙানি কিশোরীকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। বিচারব্যবস্থাই হারিয়ে দিয়েছিল তাকে। কলকাতা হাই কোর্টের সেই বিতর্কিত ‘যৌন সংযম’ মামলায় বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।

Advertisement

২০২৩ সালে একটি যৌন হেনস্থার মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চের একটি মন্তব্য নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। দু’মিনিটের তৃপ্তির জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারানো উচিত নয়। উচ্চ আদালতের ওই পর্যবেক্ষণের পরেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। হাই কোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চ। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় জানিয়েছিল, দোষীর কী সাজা হবে, তা ঠিক হবে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে।

সম্প্রতি শীর্ষ আদালতে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে ওই কমিটি। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে এক জন মনোবিদ এবং এক জন সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। বিশেষজ্ঞ কমিটি জানায়, যাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মেয়েটি তাঁকেই বিয়ে করেছে। এখন তাঁর সঙ্গেই সংসার করে। তাঁদের সন্তানও রয়েছে। ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। বর্তমানে তাঁর মানসিক এবং পারিবারিক অবস্থা কেমন, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা।

Advertisement

কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, যা ঘটেছিল, তাকে কখনওই অপরাধ হিসাবে দেখেনি মেয়েটি। বরং, সেই সময় অভিযুক্ত ওই যুবককে ‘অপবাদের’ হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তাতেই এখনও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ওই তরুণী।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সমাজ ওঁকে খারাপ নজরে দেখেছে। আমাদের বিচারব্যবস্থাই ওঁকে হারিয়ে দিয়েছে। ওঁর নিজের পরিবার ওঁকে পরিত্যাগ করেছে। আইনের পরিভাষায় ওই ঘটনাকে অপরাধ হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া হলেও মেয়েটি কখনওই তা মেনে নেয়নি। এই মামলা সকলের চোখ খুলে দেওয়ার মতো।’’ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ওই তরুণীর আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। দশম শ্রেণির পরীক্ষার পর তাঁর জন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা করা দরকার। আদালতের মন্তব্য, ‘‘গোটা ব্যবস্থাই ওঁকে ব্যর্থ করেছে।’’

প্রসঙ্গত, যৌন হেনস্থার ওই মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের ‘যৌন আবেগ’ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। দু’মিনিটের তৃপ্তির জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ কখনওই যেন না হারায়। সমাজের চোখে ‘ছোট’ হতে হয়, এমন কিছু যাতে না করে তারা। ওই বয়সের ছেলেদেরও উচিত, মেয়েদের যোগ্য মর্যাদা এবং প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া। উচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণে আপত্তি জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশেই তা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়।

শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, মামলা শোনার পর ন্যায্য রায়ই দেওয়া উচিত বিচারপতিদের। সেই রায় যেন কখনওই বিচারপতির ব্যক্তিগত মতামত বা দর্শন দ্বারা প্রভাবিত না হয়। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, হাই কোর্টের রায়ের নথিতে নানা জায়গায় ‘আপত্তিকর এবং অনাবশ্যক’ বক্তব্য রয়েছে, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এ বর্ণিত কিশোর-কিশোরীদের অধিকারের ‘পরিপন্থী’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement