কামরা নিয়ে মহিলা-পুরুষ দ্বন্দ্বে রেল অবরোধে চূড়ান্ত নাকাল যাত্রীরা

পথ দেখিয়েছিল খড়দহ। একটি লোকাল ট্রেনকে কেন্দ্র করে সমাজে মহিলা এবং পুরুষদের আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়ার যে ছবিটা গত সোমবার সেখানে দেখা গিয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি দেখল বুধবারের বামনগাছি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ১৫:২৬
Share:

পথ দেখিয়েছিল খড়দহ।

Advertisement

একটি লোকাল ট্রেনকে কেন্দ্র করে সমাজে মহিলা এবং পুরুষদের আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়ার যে ছবিটা গত সোমবার সেখানে দেখা গিয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি দেখল বুধবারের বামনগাছি। শুধু বামনগাছি নয়, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল দত্তপুকুর থেকে বারাসত, মধ্যমগ্রাম হয়ে বিরাটিতে। তার জেরে জখম হলেন বেশ কয়েক জন। মহিলাদের উদ্দেশে কটূক্তি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে ছোড়া হল রেললাইনের পাথর। আবার পুরুষ যাত্রীরাও পাল্টা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

মহিলাদের জন্য বিশেষ ট্রেন মাতৃভূমি লোকালের কয়েকটি কামরায় পুরুষ যাত্রীরা উঠতে পারবেন। রেলের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে গত সোমবার সেখানে রেল অবরোধ করেন মহিলা যাত্রীরা। সেই অবরোধকে মান্যতা দিয়েই রেল ওই দিন বিকালে জানিয়ে দেয়, রানাঘাট মাতৃভূমি লোকালের ক্ষেত্রে আপাতত ওই নির্দেশ তুলে নেওয়া হল। কিন্তু, পূর্ব রেলের বিভিন্ন শাখার বাকি ছ’টি মাতৃভূমি লোকালের ক্ষেত্রে ওই নির্দেশ বহাল থাকবে। আর সেই নির্দেশকে ঘিরেই এ বার নাকালের চূড়ান্ত হলেন বনগাঁ এবং হাসনাবাদ শাখার যাত্রীরা।

Advertisement

এই সংক্রান্ত আরও তথ্য

অবরোধ নামা

এ দিন সকাল সওয়া আটটা নাগাদ বামনগাছিতে পৌঁছয় ডাউন বনগাঁ মাতৃভূমি লোকাল। তার পরই ওই ট্রেনের মহিলা যাত্রীরা অবরোধ শুরু করেন। তাদের দাবি, ৯ কামরার মধ্যে তিনটেতে পুরুষরা তো উঠছেন বটেই, মহিলাদের জন্য নির্ধারিত কামরাতেও তাঁরা উঠে পড়ছেন। কাজেই রেলের কাছে তাঁরা আবেদন জানান, ৯ কামরার বদলে এই ট্রেনটিকে ১২ কামরার করতে হবে। বাড়তি তিনটি কামরায় পুরুষরা উঠলে দু’ তরফেরই সুবিধা হবে। এই নিয়ে সোমবার তাঁরা একটি স্মারকলিপি জমা দেন শিয়ালদহ ডিআরএম অফিসে। কিন্তু, দু’দিনে কোনও সুরুহা না মেলায় এ দিন তাঁরা অবরোধ করতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন অবরোধকারীরা। তাঁদের তরফে শম্পা চক্রবর্তী লাহিড়ি বলেন, ‘‘আমরা পুরুষদের জন্য বাড়তি কামরার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু, ওদের কথা বলতে গিয়ে আমরা যে ভাবে হেনস্থার শিকার হলাম, তা ভাবা যায় না।’’

বামনগাছিতে শম্পারা যখন অবরোধ করছেন, তখন পুরুষ যাত্রীরা তাঁদের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন কটূক্তি। এমনকী, পাথরও। ধেয়ে গিয়েছেন তাঁদের দিকে। মারামারি, হাতাহাতিও বাদ যায়নি। তখন জিআরপিকে ফোন করেন মহিলা যাত্রীরা। তাদের দাবি, জিআরপি আসছি আসব করে গোটা বিষয়টা এড়িয়ে যায়। এর অনেক ক্ষণ পর পুলিশ এলেও পরিস্থিতি কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তারা না পেরেছে পুরুষদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে, না পেরেছে মহিলাদের অবরোধ তুলতে। এক মহিলা বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘‘মহিলা পুলিশ থাকলেও তারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছে কিনা বুঝতে পারলাম না। ওদের কথাতেই সায় দিতে দেখলাম তাঁদের।’’

কোনও ভাবে কথাবার্তা বলে সমঝোতার মাধ্যমে যখন অবরোধ তোলা গেল, তত ক্ষণে দত্তপুকুরে অবরোধ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে পুরুষ যাত্রীরা মাতৃভূমি লোকাল তুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। মহিলা কামরা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। রেলের লাইনের উপর তুলে দেওয়া হয় স্লিপার। পাথর ডাঁই করে দেওয়া হয় লাইনের উপর। পরে পুলিশ এসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এর পর র‌্যাফ নামানো হয়। আর তাতেই পিছনে সরতে থাকেন পুরুষ যাত্রীরা। অবরোধ উঠে যায়।

কিন্তু, তত ক্ষণে বিরাটিতে অবরোধ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে বারাসত মাতৃভূমি লোকালে উঠে মহিলা যাত্রীদের উফর রীতিমতো হামলা চালানোর অভিয়োগ ওঠে। ছিনিয়ে নেওয়া হয় হাতের ঘড়ি এবং মোবাইল। এর জেরে বামনগাছি থেকে ছেড়ে আসা মাতৃভূমি বনগাঁ লোকাল আটকে যায় মধ্যগ্রামে। সেখানেও বিক্ষোভ দেখান পুরুষ যাত্রীরা। মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে।

তত ক্ষণে, বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়েছে ট্রেন। দফায় দফায় অবরোধের জেরে প্রায় গোটা দিনটাই অবরুদ্ধ হয়ে রইল বনগাঁ-হাসনাবাদ শাখা। অফিস পৌঁছতে পারলেন না বেশির ভাগ যাত্রী। কলকাতার হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগে চিকিত্সার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পৌঁছতে পারলেন অনেকে। ফের যে বাড়ি ফিরে যাবেন, তারও উপায় ছিল না। কারণ, আপ এবং ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি যশোহর এবং টাকি রোডে ছিল মারাত্মক জ্যাম। অটো, টোটো, ভ্যানরিকশা, ট্যাক্সি, বাস সবই ভিড়ে ঠাসা। এবং তাদের ভাড়াও প্রায় চার গুণ। পাশাপাশি অবরোধকারীদের সঙ্গে নিত্যযাত্রীদের গণ্ডগোলের জেরে আহত এবং জখম হয়েছেন অনেকে।

ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন