ফতিমা ওরফে লিচি বিবি
ছয় ছেলেমেয়ের মা সে। তিন মেয়ের মধ্যে দু’জন বিবাহিত। তিন ছেলের এক জন অটোরিকশা চালক, বাকি দু’জন কারখানার শ্রমিক। স্বামী প্লাস্টিকের পাউচে ভরে চোলাই মদ বিক্রি করে। আর সে নিজে আনাজ ব্যবসায়ী। আগরার পাইকারি বাজার থেকে আনাজ কিনে সুশীল নগরে বাড়ির কাছে বসে বিক্রি। কিন্তু এটা তার আসল পরিচয় নয়। আদতে সে জাল নোটের কারবারি।
আসল নোটে আড়াইশো টাকা দিয়ে হাজার টাকার জাল নোট কিনে সে ছড়াত আনাজ মন্ডিতে। ফতিমা ওরফে লিচি বিবি নামে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলাকে সুশীল নগর থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। শনিবার তাকে কলকাতার এনআইএ কোর্টে তোলা হয়। ফতিমার জন্ম বাংলাদেশে। ১২-১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় আগরার শের আলি খানের সঙ্গে। তিনি মূক-বধির। ফতিমার আধার কার্ডও উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা।
ফতিমাকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে মালদহে ঢোকা জাল নোটের সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমা ভাবিয়ে তুলেছে তদন্তকারীদের। মালদহ থেকে আগরা প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দূরে। এনআইএ জেনেছে, বাংলাদেশের এক নাগরিক বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এ দেশে ঢুকত। কিন্তু জাল নোটের তাড়া সীমান্ত টপকাত চোরাপথে। বাংলাদেশের সেই নাগরিক আনারুল ইসলাম মালদহের কালিয়াচকে গিয়ে ওই জাল নোট নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে নিত। তার পর আগরায় গিয়ে পৌঁছে দিত ফতিমার হাতে। এমনটা চলেছে নয় নয় করে অন্তত ১২ বছর।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ এলাকার পারচৌকা গ্রামের আপেল শেখ এই চক্রের পাণ্ডা। এ মাসের গোড়ায় আপেলকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে আইবি সূত্রের খবর। লিচি বিবিরও বাড়ি সেই পারচৌকা গ্রামে। পারচৌকার পাশের গ্রাম খরিয়ালে বাড়ি আনারুলের।
গত বছর কালিয়াচকে বমাল গ্রেফতার হওয়া আনারুল জেরায় এনআইএ-কে জানায়, আপেল শেখই তাকে লিচি বিবির হদিস দিয়েছিল। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ২০১৫ সালে বৈধ মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে এ দেশে ঢোকা আনারুল বেশ কিছু দিন কাটিয়েছিল আগরায়, লিচি বিবির বাড়িতে।
আরও পড়ুন:
প্রাথমিকে নতুন শিক্ষকদের বদলি নিয়ে পার্থের দুই সুরে বিভ্রান্তি
এক গোয়েন্দা অফিসার বলছেন, ‘‘এদের নেটওয়ার্ক অবাক করে দিচ্ছে। জাল নোট চক্রের পাণ্ডা জানে, তার গ্রামের কোন মেয়ে বিবাহ সূত্রে ভারতের কোথায় আছে। সেখানে সে পাঠাচ্ছে আনারুলের মতো বাহককে।’’ তিনি জানান, আগরায় আনাজের পাইকারি বাজারে রোজ নগদে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়। সেখানে রোজ কিছু কিছু করে পুরনো ১০০০ ও ৫০০ টাকার জাল নোট চালিয়ে দিত লিচি বিবি। ক্বচিৎ কখনও ধরা পড়ে গেলে লিচি বিবি চিৎকার জুড়ে দিয়ে বলত— ‘‘যে ঠকাল তাকে দেখে নেব!’’ আর যাকে জাল নোট দিয়েছিল, তার কাছে ‘মাফ’ চেয়ে নিত। এলাকায় পুলিশের মেসেও আনাজ সরবরাহ করায় একটা পরিচিতি তৈরি করেছিল সে। তাতেই লিচির ধারণা হয়েছিল, পুলিশ তাকে ছুঁতেও পারবে না।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত নভেম্বরে সরকার হঠাৎ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময়ে তার হাতে ১০০০ টাকার গোটা ২০ জাল নোট ছিল। তার প্রায় সবগুলো সে চালিয়ে দিতে পারলেও দু’টো নোট ঘরে থেকে গিয়েছিল। গোয়েন্দারা তা বাজেয়াপ্ত করেছেন।