স্টেশনের আলোয় পড়েই উচ্চ মাধ্যমিকে প্রীতি

মেয়ের নাম প্রীতি পাল। ১২ বছর আগে ছোট্ট প্রীতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাস্তায়। শিক্ষিকা কান্তা চক্রবর্তীর কাছে তাকে দিয়ে যান এক জন। তবে শুধু প্রীতি নয়, কান্তাদেবীর প্ল্যাটফর্মের সংসারে এখন ২০টি মেয়ে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিদিন দমদম স্টেশনে তাদের পড়ান তিনি।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৪
Share:

প্রস্তুতি: পরীক্ষার আগে ‘দিদিমণি’ কান্তা চক্রবর্তীর কাছে প্রীতি পাল। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

দমদম স্টেশনের চাতাল। সুখটান দিচ্ছে কেউ, কেউ ফোনে তারস্বর। পাশে পলিথিন পেতে পড়ছে এক দল কচিকাঁচা, স্টেশনের আলোতেই। চশমা পরা এক জন বইয়ের পাতায় ডুবে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন মধ্যবয়সি এক মহিলা। আজ, মঙ্গলবার মেয়েটির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।

Advertisement

মেয়ের নাম প্রীতি পাল। ১২ বছর আগে ছোট্ট প্রীতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাস্তায়। শিক্ষিকা কান্তা চক্রবর্তীর কাছে তাকে দিয়ে যান এক জন। তবে শুধু প্রীতি নয়, কান্তাদেবীর প্ল্যাটফর্মের সংসারে এখন ২০টি মেয়ে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিদিন দমদম স্টেশনে তাদের পড়ান তিনি। তবে এই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক (বাণিজ্য) দিচ্ছে প্রীতিই। ইচ্ছে, ব্যাঙ্কে চাকরি করবে আর দিদিমণির মতোই প্ল্যাটফর্মে পড়াবে বাচ্চাদের। দমদমের কে এল এস স্কুলের ছাত্রীটি বলে, ‘‘রাস্তায়, প্ল্যাটফর্মে অনেক ছেলেমেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিক্ষে, নেশা করছে। ওদের পড়াশোনার জন্য অনেককে দরকার। আর এই স্কুলটাও তো চালিয়ে যেতে হবে।’’

সোমবার বিকেলে তখন দিদিমণিকে ঘিরে পড়া-খেলায় মগ্ন বুলবুলি, তোতা, টুনটুনি, দোয়েলরা। সকলেরই অভিভাবক— কান্তা চক্রবর্তী। তাঁর কোলে ক্লাস ওয়ানের ময়না। হঠাৎ কানে কানে একজনের বায়না, ‘‘ফুচকা খাব।’’ দিদিমণি বলেন, ‘‘দিদির পরীক্ষা না, যদি শরীর খারাপ করে! ঠিক আছে। সবার দু’টো করে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ল্যাব্রাডরকে টেক্কা দিয়ে সেরা নেড়ি

টানা ১২ বছর বেহালায় নিজের স্কুল, সংসার সামলে এ ভাবেই মেয়েদের মানুষ করে চলছেন কান্তাদেবী। প্রতিদিন সকালে মেয়েরা সাঁতার কাটতে যায় হেদুয়ায়। প্ল্যাটফর্মে ফিরে খাবার খেয়ে ধ্যান, পড়াশোনা। স্নান করে চলে যায় নিজেদের স্কুলে। এর মধ্যেই ছবি আঁকা, ক্যারাটে, গান শেখা। কান্তাদেবীর সঙ্গী সুস্মিতা, তমাল, নারায়ণ, সোমনাথ, মৃগাঙ্ক, তনুশ্রী। কেউ পড়ান, কেউ ক্যারাটে শেখান। রেলের কর্তা, পুলিশ, হকার থেকে শুরু করে স্থানীয় ভোলা, লাল, গৌতম, অমলেরাও রয়েছেন পাশে। কেউ খাবার এনে দেন। চাতাল পরিষ্কার করে দেন কেউ।

দমদম ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের হকার-ঘর থেকে এভাবেই বড় হওয়া প্রীতিদের। তবে উচ্চ মাধ্যমিক বলে কথা। টেনশন তো হবেই। প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন কান্তাদেবী। বলেন, ‘‘দেখবি, সব কমন পড়বে, ভাল হবে। স্কুল ছুটি নিয়েছি, সঙ্গেই তো থাকব।’’

ধাতস্থ হয়ে ফের পড়ায় ডুবে যায় মেয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন