কুমারী পুজোয় ফতেমাকেই আবার চায় দত্ত পরিবার

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২২
Share:

দত্ত বাড়ির কুমারী পুজোয় ফতেমা। ফাইল চিত্র

এ বছরের দুর্গাপুজোয় মুসলিম পরিবারের কন্যাকেই কুমারী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। ধর্মীয় গোঁড়ামি কাটিয়ে ‘কালিকা’ (চার বছরের কুমারী যে নামে পূজিতা হয়) রূপে পুজো করেছিলেন কামারহাটির ফতেমাকে। বর্তমানে ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ এবং বিভাজনের এই আবহেও অবশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেই ছবিতে আঁচ লাগতে দিতে চায় না বাগুইআটির দত্ত পরিবার। তারা চায়, নতুন বছরেও অটুট থাকুক দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন। চায়, আগামী বছরেও তাদের পুজোয় কুমারী হয়ে আসুক ফতেমার মতোই কেউ।

Advertisement

‘‘আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা মানুষ। তার বাইরে তো আর কিছু নেই। আমার ছেলেমেয়ে যে স্কুলে পড়াশোনা করে, সেখানে তো অন্য ধর্ম-জাতের শিশুরাও আছে। তা হলে তো সকলের জন্য আলাদা স্কুল বানাতে হয়’’— বলছেন দত্ত পরিবারের কর্তা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তমাল দত্ত। এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাই ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’-এর ভাবনাতেই আস্থা রাখতে চাইছে অর্জুনপুরের তালতলার দত্ত পরিবার।

মানুষে মানুষে বিভেদে বিশ্বাসী নয় ফতেমার পরিবারও। তাই তো হিন্দু পরিবার থেকে দুর্গাপুজোয় মেয়ের কুমারী হওয়ার প্রস্তাব আসামাত্র সানন্দে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন ফতেমার মা বুশরা। দেশ জুড়ে নয়া আইনের বিরোধিতাকে সমর্থন করে তিনি বলছেন, ‘‘সব ধর্মের মেলবন্ধনেই তো আমাদের দেশ। সেখানে কোনও বিভেদের প্রশ্ন নেই।’’ একই সুর দত্ত পরিবারের গিন্নি মৌসুমীর গলায়। ‘‘প্রতিটি নারীই তো মা। ওই মুসলিম বালিকার মধ্যেও আমরা সেই মা দুর্গাকেই খুঁজে পেয়েছিলাম। তাই কোনও বিভেদ মানতে পারছি না। সবাইকে নিয়ে তো আমাদের দেশ’’— বলছেন তিনি।

Advertisement

এই বিভেদের গণ্ডি মুছে দিতেই বাড়ির পুজোয় কুমারী হিসেবে ফতেমাকে বেছে নিতে বিন্দুমাত্র আপত্তি ছিল না দত্ত পরিবারের বাকি সদস্যদের। তবে সেই চেষ্টা এ বছরেই প্রথম নয়। তমাল জানাচ্ছেন, এর আগেও বাড়ির পুজোয় ডোম সম্প্রদায়ের এক শিশুকন্যাকে কুমারীর আসনে বসিয়েছিলেন তাঁরা। এ বছর পুজোর জন্য তাঁরা কুমারী খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন পূর্ব-পরিচিত মহম্মদ ইব্রাহিমকে। নিজের চার বছরের ভাগ্নি ফতেমাকে দত্ত পরিবারের কুমারী হিসেবে ভাবতে বিশেষ সময় নেননি তিনি। দেশের এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে সেই ইব্রাহিম মনেপ্রাণে চাইছেন, ‘‘দেশটাকে যেন কোনও জাত-ধর্মের বেড়াজালে আটকে রাখা না হয়।’’

সেই বেড়াজাল ছিঁড়ে বেরিয়েই তো তাই দত্ত বাড়ির পুজোয় সকলকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ইব্রাহিম ও তাঁর পরিবার। পাত পেড়ে খেয়েছিলেন পুজোর ভোগ। সর্ব-ধর্মের সমন্বয়ের এই বৈশিষ্ট্যই এ দেশের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য বলে মনে করেন ইব্রাহিমের আর এক দাদা মহম্মদ আহমেদও। ‘‘সবাইকে নিয়েই তো চলতে জানে আমার দেশ। আমরাও যেমন দুর্গাপুজোয়, বড়দিনে সামিল হই। তেমন আমাদের ঈদ ও অন্য উৎসবেও ওঁরাও তো আসেন’’— বলছেন তিনি। তাই ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি নয়, বরং সকলে পাশাপাশি দাঁড়িয়েই নতুন বছরটা শান্তিতে কাটাতে চান তমাল-মৌসুমী-বুশরা-আহমেদেরা।

তবে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা কেন— তা অবশ্য বোঝে না ছোট্ট ফতেমা। শুধু জানে, এ বছর সে ‘দুগ্গা’ হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন