মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে সে জেলায় হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘বাংলার বাড়ি প্রকল্পে’ ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দিলেন ঘরের প্রতীকী চাবি। এ ছাড়া পহেলগাঁও কাণ্ডের পর জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে নিহত সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের স্ত্রীকে হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতে তুলে দিয়েছেন ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্যও।
মুর্শিদাবাদের সভা থেকে সকলকে মিলেমিশে থাকার বার্তা দেন মমতা। বলেন, “বিজেপি কিংবা কোনও মৌলবাদী সংগঠনের কথা শুনে প্ররোচিত হবেন না। আপনারা নিজেরা ভাগ হওয়ার থেকে আমার গলাটা দেহ থেকে ভাগ করে দিন। তাতে আমি খুশি হব।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সব ধর্মকে ভালবাসি। হিংসা ছড়াতে এলে মা-বোনেরা তা রুখবেন।”
মুর্শিদাবাদে নতুন মহকুমা গঠনের ঘোষণাও করেছেন তিনি। জানিয়েছেন সুতি, ধুলিয়ান এবং ফরাক্কার মানুষদের জন্য নতুন মহকুমা অফিস গঠন করা হচ্ছে।
ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই হিংসা ছড়িয়েছিল মুর্শিদাবাদে। সেই জেলাতে দাঁড়িয়েই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওয়াকফ নিয়ে আমাদের এখানে কোনও প্রশ্ন নেই। এই নিয়ে আমি কিছু বলব না। ওয়াকফ নিয়ে বলার থাকলে দিল্লিতে যান। বাংলায় আমি আছি মাথায় রাখবেন।” তিনি জানান, তাঁর সরকার কোনও ধর্মেরই সম্পত্তি অধিগ্রহণের পক্ষে নয়।
বাংলায় কথা বললে ভিন্রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে! মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক সভা থেকে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। এই সূত্রেই বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত বাংলার শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি কিংবা কোনও মৌলবাদী সংগঠনের কথা শুনে প্ররোচিত হবেন না। আপনারা নিজেরা ভাগ হওয়ার থেকে আমার গলাটা দেহ থেকে ভাগ করে দিন। তাতে আমি খুশি হব।”
সুতি, ধুলিয়ান এবং ফরাক্কার মানুষদের জন্য নতুন মহকুমা অফিস গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুর্শিদাবাদে ১৭৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুর্শিদাবাদে ১৬৭ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট ৭১৮ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা।
জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে নিহত সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদের সুতিতে প্রশাসনিক সভা থেকে নিহতের স্ত্রীকে পাশে নিয়েই এই ঘোষণা করেন তিনি। নিহত জওয়ানের স্ত্রীকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করার পাশাপাশি পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি জওয়ানের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্বও নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।
সুতির সভাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী। ‘বাংলার বাড়ি প্রকল্পে’ মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দিলেন প্রতীকী চাবি।
কপ্টারে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে পৌঁছোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বিডিও অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।
আবহাওয়া খারাপ থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর চপার উড়তে দেরি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বহরমপুর থেকে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। যাবেন জঙ্গিপুরে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন তিনি। তার আগে শমসেরগঞ্জের বিডিও অফিসে আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাঁর।
সোমবার মুর্শিদাবাদে পৌঁছেই সেই জেলায় হিংসার ঘটনার জন্য দেশের শাসকদল এবং বিএসএফকে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ করেন যে, লিয়ান, সুতির হিংসায় বিএসএফের কারণেই অশান্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘দেশের অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার কে? আমি জানি না। আমাকে কয়েক জন ছাত্র বললেন। বিজেপি এর জবাব দিতে পারবে। অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার দেশ চালাচ্ছেন। আমি তাঁকে বলব, চেয়ারে বসে ভেদাভেদের রাজনীতি করবেন না। সাম্প্রদায়িক অশান্তি না-করে, সীমান্ত রক্ষায় নজর দিন।’’ মুখ্যমন্ত্রী নাম না-করলেও মনে করা হচ্ছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেই নিশানা করতে চেয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে কী ভাবে অশান্তি হল? কেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে গেল? কারা এর নেপথ্যে? সোমবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সমস্তটাই যাচাই করে দেখছেন। খবরাখবর নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শীঘ্রই এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ্যে আনা হবে।’’
দু’দিনের মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে বহরমপুরে পৌঁছোন তিনি। মঙ্গলবার সেখান থেকে ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ, সুতির মতো উপদ্রুত এলাকায় তাঁর যাওয়ার কথা। জঙ্গিপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করারও কথা রয়েছে তাঁর।