এসআইআর মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। —প্রতীকী চিত্র।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের এজলাসে এসআইআর মামলার শুনানি শুরু হয়। সেখানে বুথস্তরের আধিকারিক (বিএলও)-দের উপর কাজের চাপের প্রসঙ্গও উঠে আসে সওয়াল পর্বে। পশ্চিমবঙ্গে এক বিএলও কাজের চাপে আত্মহত্যা করেছেন বলে এজলাসে জানান আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। অন্য দিকে মূল মামলার শুনানির সময়ে এই প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সওয়াল করা হয়। কী ভাবে দু’মাসের মধ্যে এসআইআর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। যাঁরা নিরক্ষর, লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরা কী করবেন, সওয়াল করেন সিব্বল। কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়, তা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা কী ভাবে বুঝবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আইনজীবীর।
আধার কার্ডের প্রসঙ্গও এ দিন উঠে আসে এজলাসে। প্রধান বিচারপতি কান্ত জানান, আধার কার্ড হল এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, “ধরুন কেউ প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দা। কেউ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। আপনারা রেশনের জন্য আধার দিচ্ছেন। এটি আমাদের সাংবিধানিক নীতির অংশ। কিন্তু শুধুমাত্র তাঁকে আধার নথি দেওয়া হয়েছে বলে কি তাঁকে এখন ভোটার হিসেবেও গণ্য করা উচিত?” বৃহস্পতিবার ফের এই মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গের মামলাটি শোনা হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর। ওই মামলায় কমিশনের জবাব তলব করছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ফের এই মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
প্রধান বিচারপতি কান্ত জানান, আধার কার্ড হল এমন একটি বিষয়, যা মাধ্যমে সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, “ধরুন কেউ প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দা। কেউ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। আপনারা রেশনের জন্য আধার দিচ্ছেন। এটি আমাদের সাংবিধানিক নীতির অংশ। কিন্তু শুধুমাত্র তাঁকে আধার নথি দেওয়া হয়েছে বলে কি তাঁকে এখন ভোটার হিসেবেও গণ্য করা উচিত?”
বিচারপতি বাগচী জানান, নথিপত্র ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা যাচাই করার সাংবিধানিক এক্তিয়ার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তিনি আরও বলেন, “আধার কার্ড কখনোই নাগরিকত্বকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রমাণ করতে পারে না। সেই কারণেই আমরা বলেছি এই তালিকার মধ্যে অন্যতম একটি নথি হতে পারে। যদি কারও নাম বাদ যায়, তবে তাঁদের নোটিস দিতে হবে।”
সিব্বল আদালতে সওয়াল করেন, এই ধরনের প্রক্রিয়া আগে কখনও দেশে হয়নি। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আগে দেশে কখনও হয়নি’— এই মাপকাঠিতে কোনও প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করা যায় না।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে সিব্বল বলেন, “আপনি দেশের বাস্তব চিত্রটি দেখুন। আপান কি মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ বা বিহারের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জানেন কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়?” তখন প্রধান বিচারপতি কান্ত জানান, এর জন্য বিনা খরচে আইনি সহায়কেরা (ফ্রি লিগ্যাল ভলান্টিয়ারেরা) আছেন। তবে সিব্বলের সওয়াল, কোটি কোটি ভোটার রয়েছেন। অনেকেই ভোট দিতে গিয়ে যদি দেখেন তাঁদের নাম নেই। তাঁরা কী করবেন?
সিব্বলের বক্তব্য, আইন অনুসারে কোনও কিছু নথিপত্রকরণের বোঝা ভোটারদের উপর চাপানো যেতে পারে না। তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “তার মানে আপনি বলতে চাইছেন ভোটার তালিকায় কারও নাম উঠে যাওযা মানে সেটি বৈধ। তার পরে যদি কেউ বলেন সেখানে ভুল রয়েছে, তা তাদের প্রমাণ করতে হবে। এটাই তো?” সিব্বল তখন সওয়াল করেন, “তথ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া কোনও ভাবেই দু’মাসের মধ্যে করা সম্ভব নয়।”
আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে জানান, এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা ভোটারের দায়িত্ব নয়। অনেকেই আছেন, যাঁরা নিরক্ষর। লিখতে-পড়তে জানেন না। যদি তাঁরা ফর্ম পূরণ করতে না পারেন, তাঁদের কি বাদ দিয়ে দেওয়া হবে? তাঁর বক্তব্য, নাম বাদ যেতেই পারে, কিন্তু তার জন্য যথাযথ কারণ থাকা প্রয়োজন।
দুপুর ২টোর কিছু পরে ফের শুরু হয় এসআইআর সংক্রান্ত মামলার শুনানি। এ বার মূল মামলাটি শুনছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
দুপুর ২টো এসআইআর সংক্রান্ত মূল মামলার শুনানি শুরু হবে। পশ্চিমবঙ্গের দায়ের করা মামলায় নির্বাচন কমিশনের কাছে জবাব তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৯ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
নতুন প্রধান বিচারপতি কান্ত এ দিন বলেন, “আমরা শুধু এসআইআরের প্রক্রিয়াগত দিক দেখছি।” আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এজলাসে জানান, যে সময়সীমার মধ্যে এসআইআর করা হচ্ছে, তাতে বিএলও-দের উপর প্রচুর চাপ তৈরি করছে। পশ্চিমবঙ্গের একজন বিএলও কাজের চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলেও জানান তিনি।
বুধবারের শুনানিতে নির্বাচন কমিশন আদালতে জানায়, বুথস্তরের আধিকারিক (বিএলও)-রা স্বাক্ষর করে ভোটারদের থেকে এনুমারেশন ফর্ম গ্রহণ করলেই তা জমা হয়েছে বলে ধরা হবে। ডিজিটাইজ়েশনের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানায় কমিশন। তাদের বক্তব্য, ডিজিটাইজ়েশন কমিশনের নিজস্ব কাজ। ডিজিটাইজ়েশন না হলেও ফর্ম জমা হয়েছে বলে ধরা হবে।