তৃণমূলের সভায় মমতা। সঙ্গে বিতান অধিকারীর মা। ছবি: অমিত দত্ত।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলার তিন জন। পাটুলির বাসিন্দা, কর্মসূত্রে বিদেশে থাকা বিতান অধিকারীকে খুন করে জঙ্গিরা। মারা যান পুরুলিয়ার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্র এবং বেহালার সমীর গুহ। সেই বিতান অধিকারীর বাবা-মাকে দেখা গেল ধর্মতলার মঞ্চে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের হাত ধরে মঞ্চে নিয়ে গিয়ে বসান। অন্য দিকে, নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাসিন্দা ছিলেন ঝন্টু আলি শেখ। জঙ্গি হামলার পর উধমপুরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় ৩৬ বছরের ওই জওয়ানের। তাঁর বাবা এসেছেন ধর্মতলায় তৃণমূলের মঞ্চে।
বিতান অধিকারীর বাবা-মায়ের সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
২১ জুলাই ধর্মতলার মঞ্চে গান গাইলেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
মন্ত্রী-গায়ক ইন্দ্রনীল সেনের পাশে গাইছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
পহেলগাঁওয়ে নিহত বাঙালিদের পরিবার উপস্থিত হয়েছেন ধর্মতলার মঞ্চে। নদিয়ার তেহট্টের নিহত সেনা ঝন্টু শেখের বাবা, পহেলগাঁওয়ে নিহত বিতান অধিকারীর বাবা-মাকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পহলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার পরে উধমপুরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হন ঝন্টু আলি শেখ। তাঁর বাবাকে ধর্মতলার মঞ্চে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী।
বিতান অধিকারীর মায়ের সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলতে উঠলেন মঞ্চে। তিনি বলেন, ‘‘আজ এক দিক্নির্দেশ দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৬ সালে বিজেপিকে ২৬-এ নামিয়ে আনতে হবে। বিজেপি বাংলা ভাষা বিরোধী। আমাদের হকের টাকা, রাজস্বের টাকা এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু পাওনা দিচ্ছে না এই বিজেপি। এরা বাংলাকে শেষ করতে চায়।’’
অরূপ বিশ্বাস। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র বলেন, ‘‘বিজেপি যখন থেকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকে সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেওয়া চলছে। আমাদের এখান থেকে এক জন ওই দিকে গিয়ে ভিড়েছেন। এটা স্বামী বিবেকানন্দের বাংলা, রবীন্দ্রনাথের বাংলা। ভাগাভাগির রাজনীতি এখানে হবে না।’’ ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের স্মৃতি টেনে এনে ফিরহাদ বলেন, সে দিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতা থেকে সিপিএম চলে গিয়েছে। আবার দরকার হলে আমরা রক্ত দেব। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। এর পর ‘বাংলা-বিরোধিতা’ নিয়ে মন্তব্য করেন ববি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা বললেই বাংলাদেশি? আমি বাংলায় কথা বলি, ক্ষমতা আছে কলার ধরে বাইরে পাঠানোর? আমাকে বাংলাদেশি বলার? আমরা একসঙ্গে থাকি। এই মাটিতেই খেয়ে বড় হয়েছি। কারও সাধ্য নেই বাংলা থেকে বার করে দেওয়ার। বাংলাভাষীদের অপমান করলে গর্জে উঠুন।’’
ফিরহাদ হাকিম। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
তৃণমূলের উত্তরপ্রদেশের নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠী বলতে উঠলেন মঞ্চে। তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘তাড়াাড়ি বাংলা শিখে নেব। বাংলায় বলতে চাই। আমাকে লোকসভা ভোটে লড়ার সুযোগ দিয়েছে তৃণমূল। আমি মমতা-অভিষেকের হাত শক্ত করার জন্য লড়াই করেছি। এ বারে হয়নি। আমি উত্তরপ্রদেশ থেকে তৃণমূলের প্রথম সাংসদ হয়ে দেখাব।’’
ললিতেশ ত্রিপাঠী। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা তৃণমূলের মঞ্চে। তিনি বলেন, অসমের মাটির কথা ভাল ভাবে তুলে ধরেছেন সুস্মিতা। মেঘালয়ের জন্যও এটা প্রযোজ্য। মুকুলের বক্তব্যের সময় মঞ্চে প্রবেশ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নতজানু হয়ে শহিদদের প্রণাম করেন।
ধর্মতলার মঞ্চে মুকুল সাংমা ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের কথায়, সুদূর অসম থেকে তৃণমূলের হাত শক্ত করেছেন সুস্মিতা দেব। মঞ্চে উঠে সুস্মিতা নিশানা করেন বিজেপিকে। মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার জন্ম শিলচরে। কিন্তু তৃণমূল অসমের এক সন্তানকে রাজ্যসভায় জায়গা দিয়েছে। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’’ এর পর সুস্মিতার অভিযোগ, অসমে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। এ জন্য বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে তিনি আগামী ভোটে অসমে বিজেপি হারিয়ে তৃণমূলকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘‘শুধু বাংলা নয়, অসমকে বাঁচাতে সেখানেও তৃণমূলকে প্রয়োজন।’’
সুস্মিতা দেব। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় মঞ্চে বসেছেন সংস্কৃতি জগতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। দ্বিতীয় সারিতে বসতে দেখা যায় তাঁদের।
মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার অভিযোগ, আদিবাসীদের রাজ্যে রাজ্যে বঞ্চনা করছে বিজেপি। কিন্তু এ রাজ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মমতার জমানায় আদিবাসীরা মাথা তুলে বাঁচছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ হিসাবে তিনি এ জন্য গর্বিত।
বিরবাহা হাঁসদা। ছবি: অমিত রায়।
ক্রমশ ভিড় বাড়ছে ধর্মতলা চত্বরে। সকলের পা শহিদ স্মরণে সভার দিকে।
ছবি: অমিত রায়।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে টাকা নিচ্ছেন মতুয়াদের কাছ থেকে। নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে বিজেপি ভাগাভাগির রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের মতুয়া মুখ মমতাবালার।
ছবি: অমিত রায়।
ধর্মতলার মঞ্চে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
সুব্রত বক্সী। ছবি: অমিত রায়।
কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা, রাজবংশী সমাজের প্রতিনিধি উত্তম ব্রজবাসীকে অসমের ফরেন ট্রাইব্যুনাল থেকে চিঠি ধরানো হয়েছিল। সেই উত্তম ২১ জুলাই ধর্মতলার মঞ্চে উপস্থিত।
রাজবংশী সমাজের প্রতিনিধি উত্তম ব্রজবাসী। —নিজস্ব চিত্র।
এক সময়ে তাঁরা একসঙ্গে বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’তে ছিলেন। সেই সৌমিত্র রায় এবং সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় পর পর সঙ্গীত পরিবেশন করলেন ধর্মতলার মঞ্চে।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ধর্মতলার মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন কবি সুবোধ সরকার, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকরী সমিতির সদস্য শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, প্রাক্তন ফুটবলার শ্যম থাপা, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপেন্দু বিশ্বাস, রহিম নবি প্রমুখ।
সভাস্থলে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
সভা শুরুর মুখে। একে একে ধর্মতলার মঞ্চে উপস্থিত হচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী এবং বিধায়কেরা। মঞ্চে এসে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।
সভার আগে ‘স্ন্যাক্স টাইম’ —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় আরও বাড়ে। সকলেই শুনতে এসেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে।
১৩ ফুট উঁচু ও ৪২ ফুট চওড়া মঞ্চে দলের সাংসদ, বিধায়ক, অতিথিরা ছাড়াও প্রত্যেক বছরের মতো শহিদ পরিবারের লোকেদের জন্য আলাদা ভাবে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধর্মতলার প্রাণকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে তিন স্তরের মূল মঞ্চ। ডান দিকে রাখা হয়েছে বক্তৃতা করার বিশেষ পোডিয়াম। ধর্মতলায় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রবিবার হাজির হন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিমেরা। উপস্থিত ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। অন্য দিকে, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের বিরোধী দল থেকে বাংলায় ক্ষমতা দখল— ২১ জুলাই দেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূলের নানাবিধ উত্থান-পতন। রয়েছে নাটকীয় কিছু ঘটনা, আছে বিতর্ক। বিগত দু’দশক ধরে ২১ জুলাই তারিখটি তৃণমূলের কাছে অঘোষিত বার্ষিক রাজনৈতিক সমাবেশ। ২০১১ সালের ১৩ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরিয়েছিল। ৩৪ বছরের বাম শাসনের পালাবদল ঘটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। তবে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা আলাদা করে ‘বিজয় উৎসব’ পালন করবেন না। জয়ের উদ্যাপন হবে ২১ জুলাই ‘শহিদ তর্পণের’ দিন। আবার গত লোকসভা ভোটে বাংলায় ২৯টি আসন জেতার পর মমতা জানান, উদ্যাপন করা হবে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে।