আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধের মেজাজ। কিন্তু তলায় তলায় কি থাকছে তৃণমূলের কিছু নেতার প্রতি নরম মনোভাব? বিজেপির ৪০ জন নেতা-মন্ত্রীর আসন্ন বঙ্গ সফর ঘিরে এমনই সন্দেহ দানা বাঁধছে দলের অন্দরে।
সন্দেহের উৎস—যাঁরা সফর করবেন, তাঁদের নামের তালিকা।
আগামী ৬ থেকে ১৪ এপ্রিল রাজ্যের ৪০টি লোকসভা কেন্দ্র চষে বেড়ানোর কথা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা-মন্ত্রী এবং সাংসদদের। তাঁরা কর্মিসভা তো করবেনই, পারলে জনসভাও করবেন। দলের রাজ্য নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমন মুখই পাঠাবেন, যাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াইয়ের বার্তা দেবেন। তা হলে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মানুষ যেমন বিজেপির দিকে ঝোঁকার ভরসা পাবেন, তেমনই চাঙ্গা হবেন দলের কর্মীরাও। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপির গুরুত্বহীন বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ নেতাদেরই পাঠানো হচ্ছে তৃণমূলের ওজনদার নেতাদের খাস তালুকে!
তবে বিজেপির মধ্যেই অন্য একটি অংশের মত, অমিত শাহেরা এখন সচতেন ভাবেই এমন কৌশল নিয়েছেন। তৃণমূলের যে নেতার প্রতি বিজেপির যাঁর সখ্যের গুঞ্জন আছে, তাঁকে দিয়েই মমতার দলের সেই নেতাকে আক্রমণ করাতে চান অমিতেরা। সেই অর্থে এই সফরসূচি বিজেপির ওই নেতাদেরও পরীক্ষা!
তমলুক লোকসভা কেন্দ্র অধিকারী পরিবারের খাস তালুক। নারদে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরে উপনির্বাচনে জিতে সেখানকার সাংসদ হয়েছেন তাঁরই ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। সেখানে বিজেপি পাঠাচ্ছে সাংসদ সত্যনারায়ণ জেটিয়াকে, যাঁর পরিবারের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের সম্পর্ক সামাজিক স্তরে যথেষ্টই মধুর। গত লোকসভা ভোটে তমলুকে বিজেপি বাদশা আলমকে প্রার্থী করায় তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল দলের অন্দরে। জেটিয়ার প্রস্তাবিত সফর নিয়েও রাজ্য বিজেপির একাংশ একই অভিযোগ তুলছে।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মুকুল রায় এবং তাঁর ছেলে শুভ্রাংশুর খাস তালুক যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সেই ব্যারাকপুরে বিজেপি প্রচারে পাঠাচ্ছে অসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হাকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সাংগঠনিক কাঠামোয় যাঁর বিশেষ গুরুত্ব নেই। স্বয়ং মমতার ঘাঁটি দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপি পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে। মমতার প্রতি যাঁর নরম মনোভাবের কথা সুবিদিত। যিনি সাম্প্রতিক অতীতে এ রাজ্যে কোনও দলীয় জনসভাতেই মমতা তথা তৃণমূলকে কড়া আক্রমণ করেননি।
মুকুল বা শুভেন্দুরা কেউ মুখ খোলেননি। তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মন্তব্য, ‘‘বাইরে থেকে নেতা উড়িয়ে এনে বাংলায় কিছু করা যাবে না! তাই বিজেপি কাকে কোথায় পাঠাল, তা নিয়ে মাথা ঘামাব কেন?”