মঞ্চে মধ্যমণি খোদ রাষ্ট্রপতি। আর সেই মঞ্চে বসা নিয়েই বেআব্রু হয়ে পড়ল রাজনীতির দলাদলি। রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান বয়কট করল তৃণমূল। দেশের প্রথম নাগরিকের সামনে সেই ‘আমরা-ওরা’র সাক্ষী রইল বৃহস্পতিবারের দাঁতন।
এ দিন দাঁতন গ্রামীণ মেলার উদ্বোধনে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২৭-এ পা দেওয়া মেলায় তো বটেই, পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় প্রথম পা পড়ল দেশের কোনও রাষ্ট্রপতির। ফলে, দাঁতনের সরাইবাজার সংলগ্ন সংহতি ময়দানে মেলা ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। সকাল থেকে রাষ্ট্রপতিকে দেখতে ভিড় ছিল বহু মানুষের। প্রণববাবু ছাড়াও এসেছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গিরিধর গামাং প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা খড়্গপুরের বিধায়ক দিলীপ ঘোষ। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম প্রধানের জন্যও মঞ্চে আসন নির্দিষ্ট ছিল। তবে মেলাস্থল যে বিধানসভার মধ্যে পড়ে, সেই কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মুর আসন মঞ্চে না থাকায় সভা বয়কট করে তৃণমূল। দলের কোনও মন্ত্রী-বিধায়কই মেলা প্রাঙ্গণে যাননি। তিন কিলোমিটার দূরে হেলিপ্যাড মাঠে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত ও বিদায় জানাতে শুধু হাজির ছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।
দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধানের ক্ষোভ, “আমাদের ডাকা হলেও স্থানীয় বিধায়ক পরেশ মুর্মুর জন্য মঞ্চে আসন রাখা হয়নি। খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষের জন্য আসন ছিল। যে দিলীপ ঘোষ আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন, তাঁর সঙ্গে আমরা বসতে পারব না। তাই ওখানে যাইনি।” পরেশবাবুও বলেন, ‘‘স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে আমাকে যেটুকু সম্মান জানানো উচিত ছিল, তা করা হয়নি।’’ দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘অনুষ্ঠানে সকলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল ন্যূনতম সৌজন্যটুকু দেখায়নি।’’
কেন মঞ্চে ঠাঁই পেলেন না স্থানীয় বিধায়ক? মেলা কমিটির ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রপতির এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের সব মন্ত্রী ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সব বিধায়ক আমন্ত্রিত ছিলেন। তবে মঞ্চে যাতে অতিরিক্ত ভিড় না হয়ে যায়, তাই বাছাই কয়েক জনের আসন রাখা হয়। মেলার আয়োজক সংস্থার মুখ্য উপদেষ্টা অলোক নন্দী বলেন, “বিধায়ক পরেশ মুর্মুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সকলকে তো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মঞ্চে আসন দেওয়া সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার জন্যই সীমিত আসন রাখতে হয়। তাই পরেশ মুর্মুর আসন মঞ্চের নীচে ছিল।” পরেশবাবুর দাবি, তাঁকে আমন্ত্রণপত্রই দেওয়া হয়নি।
আমন্ত্রণ সত্ত্বেও আসেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবুর জন্য নির্দিষ্ট আসনেই বসেন বিজেপি বিধায়ক দিলীপবাবু। তা নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। পরে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির পাশে শিক্ষামন্ত্রীর আসন ফাঁকা থাকায় দেখতে খারাপ লাগছিল। তাছাড়া, রাষ্ট্রপতি ডেকেছিলেন। তাই ওই আসনে বসি। এতে বিতর্কের কিছু নেই।’’