আগেও অপহৃত হয়েছিলেন অজয়

এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। রাজনীতি তাঁর নেশা ছিল। পাশাপাশি তিনি খালে মাছ-কাঁকড়া ধরতেও ভালবাসতেন।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:১৭
Share:

অজয় মণ্ডল।

রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে নানা হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কোনও দিন মাথা নত করেননি তিনি। তবে তাঁকে এ ভাবে খুন হতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি সিপিএম কর্মী অজয় মণ্ডলের (৫৪) বাড়ির লোক।

Advertisement

পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েতে দক্ষিণ লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের অজয়ের দেহ উদ্ধার হয় তাঁরই বাড়ির কাছে একটি খালের ধার থেকে। দেহ উদ্ধারের পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

স্থানীয় সূত্রের খবর, অজয়ের পারিবারিক অবস্থা ভাল নয়। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। টাকার অভাবে পড়া ছাড়তে হয় তাঁকে। তবে অজয় ছোট থেকে বামপন্থী আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। এরপরেই ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন অজয়। কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এলাকার কৃষক নেতা ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক যোগেশ্বর দাসের হাত ধরে তাঁর রাজনীতিতে আসা। পাথরপ্রতিমা গ্রাম পঞ্চায়েতে দু’বার সদস্য ছিলেন অজয়। এ বারে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ওই পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েতের আহ্বায়ক হিসাবে দল তাঁকে নিয়োগ করেছিল।

Advertisement

এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। রাজনীতি তাঁর নেশা ছিল। পাশাপাশি তিনি খালে মাছ-কাঁকড়া ধরতেও ভালবাসতেন। সময় পেলে দিনমজুরের কাজও করতেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পরিবারের লোকজনের দাবি, বিরোধীরা তাঁকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। অজয়ের বাড়ির লোক জানান, তা তুলে নেওয়ার জন্য তৃণমূলের লোকজন তাঁকে চাপ দিতে থাকে। এমনকী তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা অজয়কে অপহরণও করেছিল বলে অভিযোগ। অপহরণের দিন কয়েক পরে রামগঙ্গা এলাকা থেকে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে। এত কিছুর পরেও তিনি মনোনয়নপত্র তোলেননি। অজয়ের স্ত্রী নন্দিতা মণ্ডলের দাবি, ওই পঞ্চায়েতের ১৯৭ নম্বর বুথে প্রায় ৪০০ ভোটার রয়েছে। সকলের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ঠিকঠাক ভোট না হওয়ায় তিনি হেরে গিয়েছিলেন।

দিন কয়েক পরে পাথরপ্রতিমা বাজারে সিপিএমের সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তার প্রস্তুতির জন্য মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকার ভগবতপুরে কর্মী সভায় তিনি গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে কাছেই খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। বাড়ির লোকের দাবি, তারপর আর বাড়ি ফেরেননি।

পরিবারের লোকজন জানান, রাত ১২টা বেজে গেলেও বাড়ি না ফেরায় তাঁরা টর্চ নিয়ে খুঁজতে বেরোন। এ দিক ও দিক খোঁজার পর খালে টর্চের আলো ফেলতেই অজয়কে দেখতে পান তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। নিহতের ভাই শান্তিরাম মণ্ডল ও পড়শিদের কথায়, ‘‘খাল পাড়ের উপরে রক্তের ছোপ দাগ ছিল। ঠোঁট ও জিব কাটা ছিল। পিটিয়ে মেরে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পাশে জালটিও পাতা ছিল।’’

ওই এলাকার সিপিএমের নেতা প্রাক্তন বিধায়ক যোগেশ্বর বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবেই তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছে অজয়কে।’’ তবে ওই মৃত্যুর ঘটনায় আমল দিতে নারাজ স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের সমীর জানা। তিনি বলেন, ‘‘ওদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই মৃত্যুটাকে নিয়ে রাজনীতি করে ভোটের বাজার গরম করতে চাইছে।’’

সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ

জানা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন