অমিত শাহ।
লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে এলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপি প্রার্থী জন বার্লার সমর্থনে শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে নির্বাচনী প্রচারে আসেন অমিত। সভামঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি।
অমিত বলেন, “এই নির্বাচন শুধু দেশ নয়, বাংলার পক্ষেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” পাশাপাশি তিনি এটাও জানান, মমতার সন্ত্রাস থেকে কেউ যদি বাংলাকে বাঁচাতে পারেন, সে একমাত্র নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরে অমিতের হুঁশিয়ারি, “আমাদের থামানো যাবে না, যত পারেন গুন্ডা নামান, আমরা জিতবই।” বাংলায় বিজেপি ২৩টি আসন জিতবে বলেও এদিনের সভায় দাবি করেন অমিত।
বাংলা থেকে তৃণমূলকে উপড়ে ফেলতে হবেও বলে হুঙ্কার ছাড়েন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বলেন, “বাংলায় আগামী দিনে গণতন্ত্র থাকবে কিনা, তা ঠিক করবে এই নির্বাচন।” পূর্ব ভারতে চলতে থাকা অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়েও এদিন চড়া সুরে বক্তব্য রাখেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় এনআরসি আনব, খুঁজে খুঁজে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াব।’’
অমিত শাহের আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘২৩টা আসন কেন, বিজেপি ১টা আসন পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাংলা সম্পর্কে তাঁর ধারণাটা খুবই কম, আমি বহুবার বলেছি যে, তাঁকে একটা ভূগোল বই দেওয়া দরকার।’’ পার্থ আরও বলেন, ‘‘এই ধরনের একটা আশা জাগিয়ে, বিজেপি ছেড়ে যাঁরা চলে যেতে চাইছেন, তাঁদের আটকানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’’
শুধু পার্থ অবশ্য নন, অমিত শাহকে এ দিন আক্রমণ করেছেন রাজ্যের আর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। বাংলায় এনআরসি চালু করে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে অমিত শাহ এ দিন যা বলেছেন, সে প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যত দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন, কোনও ভারতীয়কে অভারতীয় করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র ভাবে লড়াই করব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে যখন দেশটা এক ছিল, তখন অনেকে এখানে ছিলেন, অনেকে ওখানে ছিলেন। বনগাঁয় প্রচুর মানুষ আছেন, উত্তর ২৪ পরগনায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচুর মানুষ আছেন। কালকে যদি বলেন, তাঁরা ভারতীয় নন, তা হলে অমিত শাহকে তুলে বাংলা থেকে বাইরে ফেলে দেবেন বাংলার মানুষ।’’
সভামঞ্চ থেকে এদিন অমিত শাহ যা বলেছেন—
• মোদীজি পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিদের মেরেছেন। পাকিস্তানের রাগ হওয়া উচিত। কিন্তু মমতা কেন রাগ দেখাচ্ছেন? মোদী সরকার জঙ্গিদের ছাড়বে না।
• বাংলায় এনআরসি আনব, খুঁজে খুঁজে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াব।
• আমাদের হেলিকপ্টার নামতে অনুমতি দেননি। একটা অমিত শাহের মুখ বন্ধ করতে পারেন। বাংলার মানুষের মুখ কী করে বন্ধ করবেন। আপনার সময় শেষ।
• মমতা কান খুলে শুনে নিন বিজেপি কর্মকর্তাদের খুন করে আমাদের থামানো যাবে না, যত পারেন গুন্ডা নামান, আমরা জিতবই।
• নরেন্দ্র মোদীজি বাংলাকে মমতার ত্রাস থেকে বাঁচাতে পারে।
• মাদ্রাসাকে ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিল, অথচ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের কোনও গুরুত্ব নেই।
• রাজ্যে জোর করে উর্দু ভাষা চাপানোর চেষ্টা চলছে।
• ইমামদের সঙ্গে পূজারিদের ভাতা দেওয়া উচিত।
• তৃণমূল এখানে তোলাবাজি চালায়।
• মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা, কমিউনিস্টদের তাড়িয়েছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কমিউনিস্টারাই ভাল ছিল। এই মুহূর্তে বাংলায় মা-মাটি-মানুষ থেকে মা মমতা চলে গেছেন, মাটি এখন অনুপ্রবেশকারীদের দখলে, মানুষ এখন সন্ত্রাসে ত্রস্ত।
• তৃণমূল সরকারকে উপড়ে ফেলে দিন, বাংলায় পদ্ম ফোটান।
• বাংলায় ২৩টি আসনে বিজেপি জিতবে।
• বিরোধীদের জোট লোক ঠকানোর জোট।
• বাংলায় ভবিষ্যতে গণতন্ত্র থাকবে কিনা, তা ঠিক করবে এই ভোট।
• তৃণমূলের থেকে অতীতের বাম সরকার ভাল ছিল।
• রাজ্যে এ বার তৃণমূলের পরাজয় নিশ্চিত।
• এই ভোট বাংলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• আগামী পাঁচ বছরে দেশের দিশা ঠিক করবে এই ভোট।
• বাংলায় পরিবর্তন আনতে হলে গলায় জোর আনতে হবে।
• ২০১৯-এর ভোট দেশের পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ।