লিড গেলে দায় বুথ সভাপতির, লোকসভা ভোট নিয়ে নির্দেশ অনুব্রতের

লোকসভা নির্বাচনে দলের নিরঙ্কুশ জয় তিনি চান। না হলে সংশ্লিষ্ট বুথ সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতির ‘কপালে দুঃখ’ আছে। রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

অনুব্রত মণ্ডল।— ফাইল চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনে দলের নিরঙ্কুশ জয় তিনি চান। না হলে সংশ্লিষ্ট বুথ সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতির ‘কপালে দুঃখ’ আছে। রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

এমনিতে বীরভূমে বিরোধীদের সংগঠনের হাল ভাল নয়। বিধানসভা নির্বাচনে ১১-০ ফল করার হুঙ্কার ছেড়েও দু’টি আসন হাতছাড়া হয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলেছিলেন ‘মশাও গলতে’ দেবেন না। সেই মতো রেকর্ড গড়ে বিরোধী-শূন্য জেলা পরিষদ গড়েছে তৃণমূল। জেলার ১৬১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে হাতছাড়া হয়েছে মাত্র দু’টি। তাতে অবশ্য সন্তুষ্ট নন অনুব্রত মণ্ডল। তাই লোকসভা নির্বাচন আসার ঢের আগেই তিনি দলের বুথ স্তরের নেতাদের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দিলেন।

এ দিন বোলপুরের এই প্রেক্ষাগৃহে জেলা তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলন এবং বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। বৈঠক থেকে জোরকদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন অনুব্রত। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের সাফল্যের খতিয়ান দিতে এলাকা ভিত্তিক সভা শুরু হবে। ১৯ নভেম্বর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। সেই সভায় পাঁচ থেকে ছ’লক্ষ কর্মীকে বীরভূম থেকে পাঠানোর জন্য ব্লক সভাপতিদের দায়িত্ব দিয়েছেন অনুব্রত।

Advertisement

ভোটের আগে দলের কর্মীদের জনসংযোগ বাড়াতে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন জেলা সভাপতি। তাঁর হুঁশিয়ারি, লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর ও বীরভূম—এই দু’টি কেন্দ্রের ৩ হাজার ৮৬১টি বুথের একটিও যদি হাতছাড়া হয়, তবে সেই বুথ সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতি কাউকেই তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। অনুব্রতের সাফ কথা, ‘‘কাজ না করলে লোকে চোর বলবে। সেটা কারও শুনতে ভাল লাগবে না। তাই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।’’

লোকসভার প্রচারে টার্গেটও বেঁধে দিয়েছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। সীমানা এলাকা খয়রাশোল, রাজনগর, মহম্মদবাজার, রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারইয়ের কিছু অংশে বিরোধীরা ভিন্‌ রাজ্য থেকে লোক নিয়ে আসবে বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। সে প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেন, ‘‘হাতে চুড়ি পড়ে আছি? মোকাবিলার দায়িত্ব আমার। মানুষ সঙ্গে আছে। কাউকে ভয় পাই না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘চাষটা আমি ভালই করি। বুথে গিয়েই দেখতে পাবেন কত ভাল চাষ হয়েছে।’’ অঞ্চল সভাপতিদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, বুথ সভাপতিদের সংশ্লিষ্ট বুথে বৈঠক করতে বলতে হবে। অনুব্রতের দাবি, পাঁচ বছরে তৃণমূলের সাফল্য আম জনতার কাছে তুলে ধরে বোঝাতে হবে ৩৪ বছরে যা হয়নি, এই কয়েক বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা করে দেখিয়েছেন।

বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথাও বলতে ছাড়েননি অকপট কেষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ রায় (জেলা বিজেপি সভাপতি) আমাকে ফোন করেন। মনসা হাঁসদা (সিপিএমের জেলা সম্পাদক) ফোন করেন, সমীর ভট্টাচার্য (সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য) ফোন করেন। ওঁদের লোকজন নেই, তাই করেন। আমি তো কাউকে ডিসটার্ব করি না। আমি তো মিটিং আটকাই না। কথা বলতেই পারে। বলতে যে হবেই।’’

এ কথা শুনে রামকৃষ্ণবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার কাছে অনুব্রত মণ্ডলের ফোন নম্বরই নেই! উনি বাজে কথা বলেছেন। যে সব বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’ মনসা হাঁসদার অভিযোগ, ‘‘আমরা অনুব্রতবাবুকে রাজনৈতিক ব্যক্তি বলেই মনে করি না। জেলার সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে কেন ফোন করতে যাব?’’

খয়রাশোল ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতেও এ দিন ব্যবস্থা নিয়েছেন জেলা সভাপতি। সম্প্রতি গুলিতে খুন হয়েছেন খয়রাশোল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। তার পর থেকেই ওই তল্লাটে শাসকদলের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দলের অন্দরে জল্পনা চলছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকেই জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে মাথায় রেখে নতুন করে ৯ জনের খয়রাশোল ব্লক কমিটি তৈরির ঘোষণা করেন অনুব্রত। যদিও খয়রাশোলের স্থানীয় নেতাদের দাবি, কমিটি ১৪ জনের। সেই তালিকায় অবশ্য একটি নামও দীপক ঘোষের বিপক্ষ গোষ্ঠীর নেই। বরং একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, এলাকায় দীপক-বিরোধী হিসাবে পরিচিত, তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরিকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিচ্ছেন জেলা সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন