বিস্তর টানাপড়েনের পরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৃহস্পতিবারের জনসভার অনুমতি দিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস মঙ্গলবার রাতে জানান, সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাঁকুড়া শহর লাগোয়া করগাহিড়ে মোদীর সভা হওয়ার কথা। কিন্তু এ দিন দুপুরে বাঁকুড়া সভায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ অভিযোগ করেন, ‘‘বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় মোদীর সভার অনুমতি থাকলেও মমতাজি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তা বাতিল করে দিয়েছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মোদীর কি এখানে সভা করার অধিকার নেই?’’ বিকেলে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও একই অভিযোগ করেন। এ দিন নয়াদিল্লিতে বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র যাদবও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এক বৈঠকের পরে অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিজেপিকে পদে পদে বাধা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় সভা করা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং জেলাশাসকেরা ‘সমস্যা’ তৈরি করছেন। তাঁর দাবি, ‘‘কমিশন বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছে।’’ সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার করগাহিড়ের যে মাঠে মোদীর সভা হওয়ার কথা, তার অনেক মালিক। সকলের ‘সম্মতি’ মেলেনি। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, মালিকানা সংক্রান্ত কিছু জটিলতা তাঁদেরই প্রথম নজরে আসে। মাঠটি শরিকি সম্পত্তি। তাই সব শরিকের সম্মতি রয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছিল।
কমিশন সূত্রের দাবি, সভার অনুমোদন নিয়ে সরাসরি ‘হস্তক্ষেপ’ করেন উপনির্বাচন কমিশনার তথা রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুদীপ জৈন। সভার অনুমোদন নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে, দুই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে ‘চরম পদক্ষেপে’র হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। পঞ্চম দফার নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে জটিলতা প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাবকেও তিনি ‘ধমক’ দেন বলে খবর। ভারপ্রাপ্তেরা মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু ঘটনা হল, সন্ধ্যায় বাঁকুড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভার অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। বাঁকুড়া জেলায় ১২ মে, রবিবার ভোট। তাই প্রচারের শেষ লগ্নে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের যে বাঁকুড়ায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে, সে অনুমান প্রশাসনের ছিল। সব ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার মোদীর সভার ঘণ্টা তিনেক পরেই চার কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামে সভা করার কথা মমতার।
এ দিন বাঁকুড়া লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের চাপে সভার অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশাসন নানা টালবাহানা করেছে।’’ সুভাষবাবুর দাবি, তাঁরা সব শরিকের অনুমতি নেওয়ার পরেও ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দেওয়া নিয়ে ঝামেলা করা হয়। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, ‘‘অন্যেরা কোথায় সভা করবে তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। চাপ দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।’’ প্রধানমন্ত্রীর সভা নিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘সৈনিক স্কুলের মাঠে সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা বিজেপির নেতা তথা দলের কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির সদস্য বি পি সিংহ দেও-ও বলেন, ‘‘সভার প্রস্তুতি চলছে।’’