লোক এনে খুনের হুমকি, বেফাঁস মন্তব্যে প্রশ্নের মুখে ভারতী ঘোষ

শনিবার কেশপুরে এসে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী। তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি থেকে বার করে এনে কুকুরের মতো মারার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক আনার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশপুর ও ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

ভারতী ঘোষ। ফাইল চিত্র

তাঁর পুলিশি মেজাজ কারও অজানা নয়। বিতর্কও তাঁর সদাসঙ্গী। বেফাঁস মন্তব্যের জেরে ফের প্রশ্নের মুখে প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ।

Advertisement

শনিবার কেশপুরে এসে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী। তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি থেকে বার করে এনে কুকুরের মতো মারার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক আনার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে ভারতীর প্রার্থিপদ বাতিলের দাবি জানাবে।

ক’দিন আগে শীর্ষা অঞ্চলে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১২ জন জখম হয়েছিলেন। শনিবার সেই এলাকায় এলে কয়েক জন তৃণমূল কর্মী ভারতীর সামনেই ‘বিজেপি-হটাও’ স্লোগান দেয় বলে অভিযোগ। তখনই চড়া স্বরে ভারতী ওই তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘মেরে খাচ্ছে আর ভয় দেখাচ্ছে। ভোট করতে দেবে না। টেনে টেনে বাড়ি থেকে বার করে কুকুরের মতো মারব। বলে গেলাম।’’ ওই মুহূর্তের একটি ভিডিয়োয় (সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার যাচাই করেনি) দেখা যাচ্ছে, ভারতী বলছেন, ‘‘ভোটের পরেও এক বছর ধরে খুঁজে খুঁজে মারব। টেনে টেনে বাড়ি থেকে বার করে আনব।’’

Advertisement

উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক আনার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। বলেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ থেকে এক হাজার ছেলে ঢোকাবো। কিছু করতে পারবি না। খুঁজে পাওয়া যাবে না তোদেরকে। যা বাড়ি যা। ঘরে ঢুকে তালা মার।’’

এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ভারতী যখন কেশপুরে দাঁড়িয়ে এ সব বলছেন, তার কিছু ক্ষণ আগেই ঘাটালে শেষ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা। সেখানে নাম না করেই ভারতীকে বিঁধেছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার কথায়, “পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি আসনে বিজেপির দু’জন দাঁড়িয়েছেন। একজন পুরুষ, একজন মহিলা। একজন গদার নেতা (দিলীপ ঘোষ), আর এক জন চোরের নেতা (ভারতী)। এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। দেব এত নীচে নেমে রাজনীতি করতে পারবে না।’’

ভারতীর উদ্দেশে মমতা আরও বলেন, ‘‘আপনি পুলিশে কাজ করার সময় যে এসএমএসগুলো পাঠিয়েছিলেন, তা প্রকাশ্যে আনলে আর বলার কিছু পাবেন না। আমরা চাইলে আপনাকে গ্রেফতারও করতে পারতাম। তা-ও ভদ্রতা করে আপনাকে ভোটে দাঁড়াতে দিয়েছি।” গ্রামসভাতেও লড়ার ক্ষমতা ভারতীর নেই বলে মন্তব্য করেছেন মমতা।

রাজনৈতিক সৌজন্যের গণ্ডি বজায় রেখে ভারতীকে মন্তব্য করতে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এমন কিছু বলবেন না, যা সব সীমা লঙ্ঘন করে।’’

বেফাঁস মন্তব্যের জন্য এই ভোট মরসুমেও নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ দিন ভারতীর মন্তব্য নিয়েও কমিশনে যাওয়ার কথা বলেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন,, ‘‘উনি পুরনো উর্দির ভাষায় এখনও কথা বলছেন, হুমকি দিচ্ছেন। এ সব কী হচ্ছে? উনি কি প্রার্থী? আমরা তথ্য হাতে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে যাব। ওঁর প্রার্থী-পদ বাতিলের দাবি জানাব।’’ সেভ ডেমোক্রেসির তরফেও ভারতীর প্রার্থিপদ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। আজ, রবিবার নির্বাচন কমিশনের দফতরে বিক্ষোভও দেখাবে তারা।

বিজেপি অবশ্য ভারতীর হুমকিকে সমর্থনই করছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ভারতী ঘোষ মারার কথা বলে থাকলে ঠিকই করেছেন। যে তৃণমূল আমাদের প্রার্থীকে মারছে, গাড়ি ভাঙছে, তাদের কি মিষ্টি খাওয়াতে হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন