দিনবদল: বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেশ করতে যাচ্ছেন জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
মাঝে ফারাক বছর তিনেকের। মাস আলাদা। তারিখটা অবশ্য সেই ১৮।
২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে কালেক্টরেটের সামনে বিজেপির ‘জেল ভরো’ কর্মসূচি সামলাতে হাজির হয়েছিলেন জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। পুলিশের সঙ্গে সে দিন ধস্তাধস্তিতে জড়িয়েছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশকে জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছিল। ক্ষুব্ধ ভারতী অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘জমায়েত থেকে আমাকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়েছে।’’
কাট টু ১৮ এপ্রিল, ২০১৯। মেদিনীপুরের কালেক্টরেটে ফের হাজির ভারতী। পরনে আর উর্দি নেই, এ বার তিনি বিজেপি প্রার্থী। লোকসভা ভোটের মনোনয়ন জমা দিতে এসে বৃহস্পতিবার ভারতী বললেন, ‘‘আমি যে আজ বিজেপির হয়ে লড়ছি, এটা শুধু বিজেপির হয়ে লড়া নয়, সাধারণ মানুষ যাঁরা প্রচণ্ড অত্যাচারিত হয়েছেন, যাঁরা দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছেন, আমি তাঁদের প্রতীক, পদ্মফুল তাঁদের প্রতীক।’’
২০১৫-র ডিসেম্বরের বিজেপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন দলের তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে দলের রাজ্য সম্পাদক তুষার এ দিন ভারতীর সঙ্গেই ছিলেন। ভারতীর ‘ভোলবদল’ তুষারের মন্তব্য, ‘‘তখন উনি জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। সরকারি পদে থাকলে ইচ্ছে না থাকলেও অনেক সময় অনেক কাজ করতে হয়!’’ সেই এক যুক্তি দিয়েছেন ভারতীও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে সম্বোধন করার প্রসঙ্গ টেনে ভারতীর বক্তব্য, ‘‘সে দিন অ্যাঙ্করের কাজ করেছি। ঘোষকের কাজ হচ্ছে যা লেখা থাকে তা পড়া। তাই করেছি। ওটা আমার নিজের বক্তব্য ছিল না।’’ এক সময় এই ভারতীই জেলায় তৃণমূলের ‘সর্বেসর্বা’ হয়ে বিরোধীদের হয়রান করতেন বলে অভিযোগ। এ দিন অবশ্য ভারতীর দাবি, ‘‘আমি যদি কিছু করতাম তাহলে তো ওদের (তৃণমূল) ইয়েসপার্সন হতাম। ইয়েসপার্সন হলে কি আর চাকরি ছাড়তাম?’’
এ দিন মিছিল করেই কালেক্টরেটের সামনে আসেন ভারতী। অরবিন্দনগরের মাঠের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলে ছিলেন বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য। ভারতীকে দেখতে কালেক্টরেটের একাংশ কর্মীর মধ্যেও উৎসাহ কম ছিল না। অনেকেই মোবাইলে ছবি তোলেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিনই ভারতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল সিআইডি। ভারতী পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, মনোনয়নের জন্য তিনি যেতে পারবেন না। প্রাক্তন আইপিএস এ দিন বলেন, ‘‘এটা চোদ্দো মাসের পুরনো মামলা। সিআইডি চোদ্দো মাস কোনও নোটিস দেয়নি। এখন মনে হল, ভারতী ঘোষ যে দিন বিজেপির হয়ে মনোনয়ন জমা দেবে, সে দিন তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। মানুষই সবই বোঝেন।’’ নির্বাচন কমিশনকেও এ দিন বিঁধেছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের কেন তদন্ত হল না সেই প্রশ্ন তুলেছেন। ভারতীর কথায়, ‘‘শুধু ভোটের দিনে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে কাজ হবে না। কেশপুরে রক্তাক্ত অবস্থা। পাঁশকুড়াতেও তাই। নির্বাচন কমিশনে বহু চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিশনের কোনও নড়নচড়ন দেখতে পাচ্ছি না।’’
কালেক্টরেট ক্যাম্পাসে এ দিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। এক সময়ে যে পুলিশকর্মীরা এসপি ভারতীকে স্যালুট ঠুকেছেন, এ দিন তাঁদের করজোড়ে নমস্কার করেছেন ভারতী। জানতে চেয়েছেন, ‘‘আপনারা সকলে ভাল আছেন তো?’’
উর্দিধারী থেকে ভোট প্রার্থী, তিন বছরে বদলে গিয়েছে সব অঙ্কই!