পরিবেশ বিপন্ন বুঝেও প্রচারে প্লাস্টিক-ফ্লেক্স

প্রশ্নটা উঠছে ভোটের প্রচারে প্লাস্টিক বর্জনের জন্য নির্বাচন কমিশনের অনুরোধকে ঘিরে। রাজনৈতিক দলগুলি ওই কমিশনের নির্দেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় কমিশনের ‘অনুরোধ’ রাখবে কি তারা? প্রশ্নটি জোরালো হয়েছে ভোটের প্রচার শুরু হতেই।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৭
Share:

বড়বাজারের দোকানে ভোটের পসরা সাজিয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের ‘নির্দেশ’ আর ‘অনুরোধ’-এর দূরত্ব কতটা?

Advertisement

প্রশ্নটা উঠছে ভোটের প্রচারে প্লাস্টিক বর্জনের জন্য নির্বাচন কমিশনের অনুরোধকে ঘিরে। রাজনৈতিক দলগুলি ওই কমিশনের নির্দেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় কমিশনের ‘অনুরোধ’ রাখবে কি তারা? প্রশ্নটি জোরালো হয়েছে ভোটের প্রচার শুরু হতেই।

কমিশন এ বার সব দলকেই অনুরোধ করেছে, ভোটের প্রচারে বেশি করে পাটের মতো প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ানো হোক। কমানো হোক প্লাস্টিক জাতীয় বস্তুর ব্যবহার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভোটের বাদ্যি বাজতে না-বাজতেই ফ্লেক্সের দোকানে বরাত উপচে পড়ছে। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। কিন্তু এত ফ্লেক্স, পলিথিনের ব্যানারের ভবিতব্য কী? তাদের দাপটে পরিবেশের বা কী হবে? দেওয়াল-লিখনে ব্যবহৃত রং পরিবেশের পক্ষে কতটা খারাপ, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

Advertisement

আমজনতার অভিজ্ঞতা, ভোট মিটলে জয়ী প্রার্থী উৎসব পালন এবং অভিনন্দনের জন্য ফের ফ্লেক্স টাঙান। পরাজিতদের ফ্লেক্স ছিঁড়ে হাওয়ায় লুটোতে থাকে। সঙ্গিন হয়ে পড়ে পরিবেশের হাল। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ভোট মিটলে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রচারের ফ্লেক্স তখন পৃথিবীর বুকে জঞ্জালের বোঝা বাড়ায়। যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ক্ষতি করে ভোটারদেরই। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের মতে, এই সব প্লাস্টিক দূষণ বাড়িয়ে পরিবেশকে আরও বেশি করে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নির্বাচনে যে-হারে নির্বিচারে ফ্লেক্স টাঙানো হয়, তাতেও কোথাও বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘‘সমস্যা মূলত সচেতনতার অভাবের। প্রচার শেষ হলে ফ্লেক্সগুলিকে অন্য ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু সে-দিকে কেউই নজর দেয় না,’’ বলেন পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। একই সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন, দেওয়াল-লিখনের রঙে ভারী ধাতু থাকে। সেগুলিও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। স্বাতীদেবীর বক্তব্য, সমাজে পরিবেশ রক্ষার প্রভাব থাকলে রাজনৈতিক দলগুলিও নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য হবে। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, লোকসভার ভোটে পরিবেশ রক্ষার দৃষ্টান্ত তৈরি করা হোক। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে হুগলির তৎকালীন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল ওই জেলায় ভোটের প্রচারে পাটজাত দ্রব্য চালু করেছিলেন। কিন্তু গোটা রাজ্যে তার ব্যবস্থা হয়নি।

রাজ্যের পরিবেশ দফতরের এক প্রবীণ কর্তা জানান, আগে দেওয়াল-লিখনের পাশাপাশি কাগজের পোস্টার, কাপড়ের ব্যানার দেখা যেত। কিন্তু ফ্লেক্স আসার পরে সেগুলি কার্যত হারিয়ে গিয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলি কী বলছে?

কেন্দ্রীয় সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প নিয়ে নানান প্রচার চালালেও প্লাস্টিক কমানোর ব্যাপারে বিজেপি নেতারা সন্দিহান। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চয়ই চেষ্টা করব। তবে নির্বাচনের খরচ যে-পরিমাণে বাড়ছে, তাতে এটা বাস্তবে করে দেখানো কতটা সম্ভব হবে, বলা কঠিন।’’

তৃণমূল নেতা এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘‘ফ্লেক্স ব্যবহার আগামী দিনে বন্ধ করতেই হবে। কিন্তু এ বার এত কম সময়ে ফ্লেক্সের বদলে অন্য কিছু ব্যবহার করা কঠিন। তবে ভোট মেটার তিন দিনের মধ্যে ফ্লেক্স খুলে ফেলতে হবে, এমন নির্দেশ দেওয়া উচিত কমিশনের।’’

সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমরা কয়েক বছর ধরেই প্রচারে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য কম ব্যবহার করছি। পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছি, তা অবশ্য বলব না।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের কমিউনিকেশন সেলের প্রধান অমিতাভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, কমিশন আরও আগে থেকে এ কথা জানালে ফ্লেক্সের বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত। এখন প্রচারে অনেক বেশি ছবি ব্যবহার করা হয়। কাপড়ের ব্যানারে ছবি ছাপানোর সময় নেই। ‘‘কাগজের পোস্টার আমরা ছাপাচ্ছি। কিন্তু ফ্লেক্স পুরোপুরি বন্ধ করতে পারব না,’’ স্বীকার করছেন অমিতাভবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন