শান্তনু ঝা
ত্র্যহস্পর্শ বোধহয় একেই বলে। রবিবাসরীয় প্রচারে হইহই করে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএমের প্রার্থীরা প্রায় একই সঙ্গে নবদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়ালেন। লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গেলেও সে ভাবে কোনও প্রার্থীই নবদ্বীপে আসছিলেন না বলে আক্ষেপ ছিল নবদ্বীপের। মার্চ মাসের শেষ দিনে বাৎসরিক হিসাব মেটানোর মতোই সেই আক্ষেপের হিসাব কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে দিয়েছেন যুযুধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা।
এদিন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরা যেন নবদ্বীপকেই পাখির চোখ করেছিলেন। কর্মিসভা, রোড শো, দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন, দলবদল থেকে মঠমন্দিরে পুজো দেওয়া কিছুই বাদ থাকল না। গঙ্গার পূর্বপাড় থেকে পশ্চিমপাড় জুড়ে প্রচার করলেন তৃণমূলের রূপালী বিশ্বাস, সিপিএমের রমা বিশ্বাস এবং বিজেপির মুকুটমণি সরকার।
সকালে সিপিএমের মিছিল দিয়ে শুরু হয় দিনের ভোট প্রচার। রমা এর আগে নবদ্বীপে স্বল্প সময়ের জন্য প্রচার করে গেলেও তৃণমুল প্রার্থী রূপালী এবং বিজেপি প্রার্থী মুকুটমণি এ দিন প্রথমবার পরিচিত হলেন নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের সঙ্গে। ফলে তাঁদের ঘিরে কর্মী সমর্থকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
রবিবার ছুটির দিন, সকালে বাজারের ভিড়টা একটু বেশিই থাকে। এ দিন ৯ টা নাগাদ সেই বাজারমুখো ভিড়ের মাঝেই প্রচার সারেন সিপিএম প্রার্থী রমা। প্রায় ঘন্টা খানেক বামুনপুকুর বাজার চত্বরে মিছিল করে সিপিএম। কখনও হাত জোড় করে আবার কখনও বা হাসিমুখে জনসংযোগ সারতে দেখা যায় রমাকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস এবং অন্য দলীয় কর্মীরা। এর পরে বামুনপুকুরে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। সেখানে বসেই তিনি বলেন, “মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্যই লড়ছে বামেরা। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষ— সকলেরই স্বার্থরক্ষায় এই লড়াইয়ে নেমেছি। মানুষ আমাদের পাশেই আছেন।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিজেপি প্রার্থী মুকুটমণি এ দিন নবদ্বীপে প্রচার শুরু করেন গ্রামাঞ্চল দিয়ে। স্বরূপগঞ্জ, চরমাজদিয়া-চরব্রহ্মনগর, মাজদিয়া-পানশিলা এবং ভালুকা পঞ্চায়েতে এ দিন প্রচার করেন তিনি। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মহেশগঞ্জে একটি দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে প্রচারাভিযান শুরু। এর পর ঝড়ের গতিতে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে কখনও কর্মীদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় সারেন, কখনও এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে সৌজন্য বিনিময় করেন। বিকেল ৪টে নাগাদ নবদ্বীপ স্টেশন রোডে একটি দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন মুকুটমণি। সেখান থেকে শহরের দক্ষিণ অঞ্চলে তেঘরিপাড়ায় একটি লজে কর্মী সম্মেলন করেন তিনি। উদ্দাম কীর্তন সহকারে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান এক দল কীর্তনিয়া। উচ্ছ্বসিত মুকুটমণি নিজেও এক সময় দুহাত তুলে নাচে যোগ দেন। সেখানে প্রথমে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সদস্যদের নিয়ে একটি ঘরোয়া বৈঠক করেন তিনি। পরে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সভা করেন। ওই সভায় সিপিএম ও তৃণমূল ছেড়ে কয়েকজন বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে আছেন দীর্ঘ দিনের বাম সমর্থক এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বাপি দেবনাথ এবং এক সময়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা বিকাশ সাধু খাঁ। ওই সভার শেষে পোড়ামাতলা, মহাপ্রভু মন্দির এবং চৈতন্য জন্মস্থান দর্শন করে দিনের প্রচারে ইতি টানেন মুকুটমণি।
অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে শহরে এসে পৌঁছন তৃণমূল প্রার্থী রূপালী। তিনি প্রচার শুরু করেন নবদ্বীপের ধামেশ্বরী পোড়ামা মন্দিরে প্রণাম করে। রূপালীকে সঙ্গে নিয়ে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা এর পর যান মহাপ্রভু মন্দিরে। মন্দির কর্তৃপক্ষ রূপালীকে উত্তরীয়, মহাপ্রভুর চিত্রপট এবং প্রসাদী মালা উপহার দেন। পায়ে হেঁটে এলাকার মানুষের সঙ্গে পরিচয় করেন তৃণমূল প্রার্থী। দুপুরে একটু বিশ্রাম এবং মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে নবদ্বীপ তাঁত কাপড় হাটে কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। তার আগে বড়ালঘাটে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ভিড় উপচানো কর্মী সম্মেলনে লোকের স্থান সঙ্কুলানে হাটের বাইরে বসানো হয় দুটি বিশালাকার জায়েন্ট স্ক্রিন। নবদ্বীপে রূপালীর প্রথম প্রচারে মঞ্চে হাজির ছিলেন প্রায় গোটা জেলা নেতৃত্ব।