প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কেটনারায়ণ মিশ্র, দেবেন সেন, রবিন সেন, হারাধন রায়, বিকাশ চৌধুরী থেকে বংশগোপাল চৌধুরী— ১৯৬২ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত, প্রতিটি লোকসভা ভোটে এই লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে বামদের ভরসা ছিল শ্রমিক নেতারাই। এ বারেও তার অন্যথা হল না। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে শ্রমিক নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করল সিপিএম।
সিপিএম কর্মীদের একাংশের মতে, এই কেন্দ্র মূলত শিল্পাঞ্চল এলাকা। শিল্পক্ষেত্রের সমস্যা তুলে ধরার জন্য দরকার শ্রমিক নেতৃত্বকেই। এমনকি, কংগ্রেসের থেকেও এক সময়ে এই কেন্দ্র থেকে জেতা আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন শ্রমিক নেতা। এই পরিস্থিতিতে গৌরাঙ্গবাবুকে প্রার্থী করা এলাকার রাজনীতির ঐতিহ্য মেনেই বলে মনে করছেন সিপিএম নেতা, কর্মীদের একাংশ।
আসানসোলের বিবি কলেজ থেকে স্নাতকের পড়াশোনা শেষ করে গৌরাঙ্গবাবু এক সময়ে কর্নাটক ও গোয়ায় খনিতে কাজও করেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়েই সিপিএমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। যোগাযোগ বাড়ে রবিন সেন, মদন ঘোষ, হারাধন রায়দের সঙ্গে। ১৯৮৭ থেকে গৌরাঙ্গবাবুর থাকেন উখড়ায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে। পরে সিটু, কোলিয়ারি মজদুর সভা অব ইন্ডিয়ার নানা সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলেছেন গৌরাঙ্গবাবু। ২০১১-য় বিধায়কও হয়েছিলেন পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। যদিও ২০১৬-য় অল্পের জন্য ওই আসনটি হাতছাড়া হয় বামেদের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১৪-র লোকসভা ভোটে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরী। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে প্রথম পর্যায়ে সিপিএম ২৫টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। সেই তালিকায় আসানসোল কেন্দ্রটির নাম না থাকায় আসনটি কংগ্রেসকে ছাড়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনাও তৈরি হয় সিপিএমের অন্দরে। তবে সেই সময়েও প্রকাশ্যেই বংশগোপালবাবু বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দাবি, এখানে সিপিএমেরই প্রার্থী হোক।’’
সেই দাবিপূরণ হওয়াতে খুশি এই কেন্দ্রের সিপিএম নেতা, কর্মীরা। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম জানার পরে শিল্পক্ষেত্রের সমস্যাকেই তিনি যে প্রচারে আনবেন তা জানিয়েছেন গৌরাঙ্গবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘খনি-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত রোধ করা, ঠিকাশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়া-সহ শ্রমিক এবং অন্য বহু ক্ষেত্রের মানুষের সমস্যার কথা প্রচারে বলব।’’
যদিও সিপিএম প্রার্থী সম্পর্কে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘প্রার্থী নিয়ে মন্তব্য করছি না। তবে সিপিএমের এখানে কোনও অস্তিত্বই নেই।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য বিশ্বনাথ যাদব বলেন, ‘‘আমরাও এই কেন্দ্রে লড়ব। আমাদের লক্ষ্য, প্রথম হওয়া।’’ বিজেপি নেতা সভাপতি সিংহের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম অস্তিত্বহীন। আমাদের লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে।’’