—ফাইল চিত্র।
ভোট-রাজনীতি জড়িয়ে গিয়েছে সোনা-কাণ্ডে। সেই ঘটনায় এ বার কলকাতা বিমানবন্দরের শুল্ক দফতরের ছয় অফিসারকে নিজেদেরই দফতরের তদন্তের মুখে পড়তে হল।
শুল্ক দফতরের খবর, ওই ছয় অফিসারকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, শুল্ক দফতর সূত্রে তা জানা যায়নি। কলকাতা বিমানবন্দরের দায়িত্বে থাকা শুল্ক কমিশনার মণীশ চন্দ্র সোমবার ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।
ওই ঘটনার তদন্তে নেমে বিধাননগর কমিশনারেটের তরফেও তিন শুল্ক অফিসারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। যাঁরা দিল্লি গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন ওই তিন অফিসার। অভিযোগ, দু’বার ডাকা সত্ত্বেও তাঁরা পুলিশের সামনে হাজির হননি। পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, সোনা-কাণ্ডে শুল্ক অফিসারেরা বিমানবন্দর থানায় যে-অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তার তদন্তে নেমেই ওই তিন অফিসারকে ডাকা হয়েছিল। এটা তদন্তেরই প্রাথমিক শর্ত। যিনি অভিযোগ করবেন, তাঁকে ডেকে সবিস্তার তথ্য নিতে হয়। কিন্তু তাঁরা হাজির না-হলে বিষয়টি আদালতে জানাতে হবে। প্রয়োজনে শুল্ক কমিশনারকেও তলব করা হতে পারে।
১৬ মার্চ ভোরে ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় আসার পরে দুই মহিলা বিমানযাত্রীর পথ আটকান ওই শুল্ক অফিসারেরা। সাত দিন পরে শুল্ককর্তা থানায় অভিযোগ করেন, পুলিশ অফিসারেরা সেই দুই মহিলাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। শুল্ক দফতরের দাবি, এর অর্থ, ওই দুই মহিলাকে আটক করার কোনও না কোনও কারণ ছিল! প্রশ্ন উঠেছে, সেই কারণ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের আটক করা হয়নি? শুল্ক দফতরের অভ্যন্তরে মূলত তা নিয়েই তদন্ত চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ যদি এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে তা দিল্লিকে জানানো হল না কেন? ঘটনার সাত দিন পরে কেন অভিযোগ জানানো হল থানায়?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
থানায় দায়ের করা অভিযোগে শুল্ক দফতর জানিয়েছে, ওই দুই মহিলার এক জন তৃণমূল নেতা, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা। খবর ছড়ায়, সে-দিন ব্যাঙ্কক থেকে নাকি হিসেব-বহির্ভূত সোনা নিয়ে আসছিলেন তিনি। প্রশ্ন, দুই যাত্রীকে এক বার টার্মিনাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে কী করে প্রমাণ করা সম্ভব যে, তাঁরা নিয়মবহির্ভূত ভাবে সোনা নিয়ে এসেছিলেন?
শুল্ক দফতরের লিখিত অভিযোগেও সোনার পরিমাণ নিয়ে কিছু লেখা হয়নি। বলা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে থাকা সব ব্যাগ পরীক্ষা করার আগেই পুলিশ তাঁদের নিয়ে চলে যায়। পরে অভিষেক সাংবাদিকদের ডেকে সেই অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেন। উল্টে তাঁর স্ত্রীকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। রুজিরাদেবীর পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে থানায় সেই অভিযোগও করা হয়েছে। যদিও বিধাননগর পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আগে শুল্ক দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। আর সেই তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগ উঠছে শুল্ক দফতরের বিরুদ্ধে। শুল্ক দফতরের অফিসারদের একাংশ জানিয়েছেন, যাঁদের বিধাননগর পুলিশের ডিএসপি সম্বিতি চক্রবর্তী ডেকে পাঠিয়েছেন, তাঁরা তো দিল্লিতে বসে। তাঁদের বিরুদ্ধেই তো ভিজিল্যান্স তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁরা কী করে এখন ওই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করবেন?
সম্প্রতি এই সোনা কাণ্ডের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপন করে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের অভিযোগ, ১৬ মার্চ শুল্ক দফতরের হাত থেকে জোর করে রুজিরাদেবীকে পুলিশ ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এমনকী, রুজিরাদেবীকে না ছাড়লে শুল্ক অফিসারদের গ্রেফতার করারও হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগ শুনে, বিষয়টি সরকারি ভাবে আদালতকে জানাতে বলেছেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এখন দিল্লিতে সেই প্রস্তুতি চলছে। মনে করা হচ্ছে, সে দিন কলকাতা বিমানবন্দরে যে শুল্ক অফিসারেরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের দিল্লি ডেকে নিয়ে যাওয়ার পিছনে এটাও একটি বড় কারণ।