আস্ত যন্ত্র আনাতে হচ্ছে শুধু নোটার জন্য!

গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞে তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। প্রায় রাজকীয় গরিমায়। তিনি নোটা। ‘নান অব দ্য অ্যাভব’।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

তাঁর খপ্পরে পড়লে ভোটের দফারফা! অর্থাৎ ভোট তখন কার্যত না-ভোট। তাঁর প্রতি তাই কোনও দল বা কোনও প্রার্থীর, এমনকি নির্দল প্রার্থীদেরও সুনজর নেই। বরং খুব খানিকটা বিরাগ আছে। উৎকণ্ঠাও আছে কমবেশি। কেননা তিনি ভোট খেয়ে নিলে যুযুধান দল বা প্রার্থীদের কোনও ফায়দা নেই।

Advertisement

অথচ গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞে তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। প্রায় রাজকীয় গরিমায়। তিনি নোটা। ‘নান অব দ্য অ্যাভব’। এতটাই তাঁর দাপট যে, আস্ত আস্ত যন্ত্র আনাতে হচ্ছে তাঁর জন্য। যেমন হচ্ছে দার্জিলিঙে। এবং যেমনটি হতে চলেছে মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রেও।

প্রার্থীর জন্য একটা আস্ত মেশিন। আবার নোটার জন্য দরকার পড়ছে একটা গোটা যন্ত্রের! দার্জিলিঙের পরে মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে এমনটাই ঘটতে চলেছে। এবং তাতে ক্রমশই চিন্তা বাড়ছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-এর দফতরের। কারণ, এ ভাবে সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে নতুন করে ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইসিআইএল) থেকে আবার যন্ত্র আনাতে হতে পারে।

Advertisement

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফার নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, বালুরঘাট, মালদহ দক্ষিণের সঙ্গেই মালদহ উত্তর কেন্দ্রে ভোট হবে। সেখানে ১৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। ফলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বা বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে তাঁদের নাম রাখতেই হবে। তাতেই লাগবে একটি যন্ত্র। অন্যটি নোটার জন্য। দার্জিলিঙের মতো এখানেও দ্বিতীয় যন্ত্রে এক নম্বরে থাকবে নোটা।

প্রার্থীদের নাম যখন যন্ত্রভুক্ত হয়ে যাচ্ছেই, তা হলে আরও একটি মেশিনের কী প্রয়োজন? ইভিএমের দু’টি অংশ। একটি বিইউ এবং অন্যটি কন্ট্রোল ইউনিট (সিইউ)। ইভিএমের একটি ব্যালট ইউনিট (বিইউ)-এ সর্বাধিক ১৬ জনের নাম অর্ন্তভুক্ত হতে পারে। কিন্তু প্রার্থীদের নামের শেষে থাকে নোটার বোতাম। যা মালদহ উত্তর কেন্দ্রের একটি যন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। তাই নোটার জন্য আর একটি যন্ত্র বরাদ্দ করতেই হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। দার্জিলিঙের পরে এটা করতে হচ্ছে মালদহ উত্তর লোকসভা আসনে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ইভিএম-ভিভিপ্যাটের ওয়্যারহাউস রয়েছে। কেন্দ্রীয় ভাবে তা রয়েছে মালদহ, মেদিনীপুর ও বর্ধমানে। একসঙ্গে বেশি ইভিএমের প্রয়োজন পড়লে কেন্দ্রীয় ওয়্যারহাউস থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় তা পৌঁছে যায়। দার্জিলিঙের ক্ষেত্রে মালদহের ওয়্যারহাউস থেকে ব্যালট ইউনিট গিয়েছিল। মালদহ উত্তরের ১৭১৩টি বুথের জন্য বর্ধমান থেকে নতুন ইভিএম যাচ্ছে।

মালদহ উত্তরের প্রয়োজনীয় ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের ফার্স্ট লেভেল অব চেকিং (এফএলসি), প্রথম দফায় বাছাই প্রক্রিয়া (র‌্যানডমাইজেশন), দ্বিতীয় দফায় বাছাই প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত প্রায় দু’হাজার ইভিএমের ব্যালট ইউনিটের যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ফলে তৎপরতা বেড়েছে জেলা প্রশাসন এবং সিইও দফতরে। এখনও পর্যন্ত প্রথম তিন দফার নির্বাচনে ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে দার্জিলিং ও মালদহ উত্তরের জন্যই লাগবে দু’টি যন্ত্র। সাধারণত, ভিভিপ্যাট থাকে ইভিএমের বাঁ দিকে। দার্জিলিং ও মালদহের ক্ষেত্রে তা দু’টি ব্যালট ইউনিটের মাঝখানে থাকতে পারে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অতিরিক্ত প্রার্থীর জন্য মালদহ উত্তর, ডায়মন্ড হারবার, কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে অতিরিক্ত ইভিএম ব্যবহার করতে হয়েছিল।

দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে দু’টি যন্ত্রের মধ্যে একটিতে প্রথমে নোটা রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল। বলা হয়েছিল, একটি ইভিএমের প্রথমে তাঁদের প্রার্থী রয়েছেন। অন্য ইভিএমে প্রথমে নোটা থাকছে। দু’টি ইভিএমে প্রার্থীদের নাম সমবণ্টন করা হোক। কিন্তু সেই ব্যবস্থা কার্যত সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছে কমিশন। এ-হেন পরিস্থিতিতে বুধবার চোপড়ার সভামঞ্চ থেকে দু’টি ইভিএম নিয়ে ভোটারদের সতর্ক করে দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মন দিয়ে শুনতে হবে। একটি মেশিনে এক নম্বরে জোড়া ফুল থাকবে। দু’নম্বর মেশিনের এক নম্বরে ভোট দেবেন না। তা হলে আপনাদের ভোট নোটায় চলে যাবে। আপনারা সকলকে বিষয়টি ভাল করে বুঝিয়ে দিন। নোটায় ভোট নেই।’’ এর পরেই মমতা নিজের শাড়িতে তৃণমূলের প্রতীক দেখিয়ে জনতাকে বলেন, ‘‘ভাইবোনেরা এক নম্বর মেশিনে প্রথমেই জোড়া ফুল থাকবে। ভুল করবেন না। মোদীকে হটাতে সকাল সকাল ঠিক ভাবে ভোট দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন