ছবি: সংগৃহীত।
প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করাই শুধু নয়, অবৈধ জমায়েত রুখতে প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির বাইরেও এলাকা ধরে ধরে ১৪৪ ধারা জারি করার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। শনিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পঞ্চম দফার ভোট প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক, বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে, সিইও আরিজ আফতাব এবং রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। সেই বৈঠকে ব্যারাকপুরে সম্ভাব্য গোলমাল ঠেকাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আগামিকাল, সোমবার পঞ্চম দফায় হুগলি, শ্রীরামপুর, আরামবাগ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, বনগাঁ এবং ব্যারাকপুর আসনে ভোট। সাধারণত, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে বৈধ ভোটার ছাড়া অন্য জমায়েত করা যায় না। এ নিয়ে কমিশনের পাকাপাকি নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, সেই চৌহদ্দির বাইরে অবৈধ জমায়েত থেকে বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের ভয় দেখানো হয়েছে। তাই এ দিন কমিশন বিভিন্ন এলাকা ধরে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দিয়েছে। তবে এলাকা বাছার ভার দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। পর্যবেক্ষকেরা তার তদারকি করবেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও বেশ কিছু এলাকাতে পৃথক ভাবে এই পদক্ষেপ করেছিল কমিশন। এ প্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যত কড়াকড়ি করবে, তৃণমূলের ভোট তত বাড়বে। ২০১৬ সালেও ওরা একই জিনিস করেছিল, আমরা ২১১টা আসন পেয়েছিলাম।’’
তবে এই পদক্ষেপ ভোটারদের মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক তৈরি করবে না তো? কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, ভোটারদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আশ্বস্ত করতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে ব্যারাকপুর আসনটিতে। কারণ, অতীতের ভোটগুলিতে সেখানে একাধিক জায়গায় বুথের বাইরে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দফার ভোটে ৫৭৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করবে কমিশন। কিন্তু অতীতের দফাগুলিতে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, জওয়ানদের উপস্থিতি অনেক জায়গাতেই টের পাওয়া যায়নি। তবে কমিশনের দাবি, এ বার বাহিনী পর্যাপ্ত থাকায় সেই সমস্যা আর থাকবে না। সূত্রের ব্যাখ্যা, এক এবং দু’টি করে বুথের ভোটকেন্দ্রে অর্ধেক সেকশন (চার জন) কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তিন এবং চার বুথের ভোটকেন্দ্রে রাখা হবে এক সেকশন (আট জন) বাহিনী। এই ভাবে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রাজ্য পুলিশ শুধু ভোটারদের লাইন নিয়ন্ত্রণ করবে। মোট ১৪২টি কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) থাকবে। এক একটি থানা এলাকায় দু’টি করে কিউআরটি থাকবে। বিবেক জানান, গত বারের থেকে কিউআরটি-এর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এমনকি, বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপস্থিতি থাকবে।
আসানসোল কেন্দ্রের ভোটে পাণ্ডবেশ্বরে ব্যাপক গোলমালের অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীরাও অভিযোগ করেছিলেন, মেঘালয় পুলিশ সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও তাঁদের নানা ভাবে প্রভাবিত করেছিল শাসক দল। অন্যান্য এলাকাতেও একই অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি এ দিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে গিয়ে বাহিনীর জওয়ানদের প্রলোভন দেওয়া এবং প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছে। সে প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে মানুষ আছে। বাইরের রাজ্যের পুলিশকে প্রভাবিত করে আমাদের ভোট জিততে হয় না। হারছে জেনে বিরোধীরা এ সব বলছে।’’
বিবেক এই প্রসঙ্গে বলেন,‘‘বাহিনীর কমান্ডারদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। জওয়ানরা যাতে শৃঙ্খলা না-ভাঙেন তাঁদের তা দেখতে হবে। রবিবার ব্যারাকপুরে গিয়ে ফের সতর্ক করব।’’ পাশপাশি ব্যারাকপুর এবং শ্রীরামপুরের হোটেলগুলিতে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ পুলিশকে দিয়েছে কমিশন। অভিযোগ, সেখানকার হোটেলগুলিতে ঢুকছে দুষ্কৃতীরা।
কমিশন এ দিনই চিঠি দিয়ে সিইও দফতরকে জানিয়েছে, ১ কোটি টাকা বা সমমূল্যের সোনা কোনও এক জন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উদ্ধার হয়ে থাকলে, তদন্ত করতে হবে। সূত্রের খবর, এই নির্দেশ আগে থেকে থাকলেও কমিশন ফের তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সিইও দফতরকে। তার পরেই আবগারি, ইনকাম ট্যাক্স এবং পুলিশের থেকে রিপোর্ট চেয়েছে সিইও দফতর। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৬০ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থ।