নাগরিক পঞ্জি

তাড়িয়ে দেবে কি? ভয় তীব্র

গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।   ইতিমধ্যে অসমে নাগরিকপঞ্জিতে বাদ গিয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম। দেশ জুড়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। বিজেপি-তৃণমূল দ্বন্দ্বও চরমে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পরিবারে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০২
Share:

তিন বছর বয়সে মায়ের কোলে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছিলেন গীতা গুপ্ত। বয়স তখন মাত্র তিন বছর। বাবা থেকে গিয়েছিলেন বাংলাদেশেই। এ দেশে ছিলেন কাকারা। তাঁদের কাছেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার পর বড় হওয়া, বিয়ে। নাতি-নাতনি নিয়ে ফুলিয়ার সবুজপল্লিতে এখন তাঁর সুখের সংসার। কিন্তু ইদানিং নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ডামাডোলে তিনি অসম্ভব ভয়ে আছেন। সব ছেড়ে আবার তাকে ফিরে যেতে হবে না তো বাংলাদেশে?

Advertisement

ইতিমধ্যে অসমে নাগরিকপঞ্জিতে বাদ গিয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম। দেশ জুড়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। বিজেপি-তৃণমূল দ্বন্দ্বও চরমে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পরিবারে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। নদিয়াতেও এর মধ্যে অনেক পরিবার রয়েছে। সীমান্ত জেলা নদিয়ায় বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনিতে দেশভাগের পর পূর্ব বাংলা থেকে এসে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে নরেন্দ্র মোদী ঘোযণা করেছিলেন, ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা এসেছেন তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেকে।

কিন্তু সেই আশা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তাই তো ৬৮ বছর বয়সে গীতাদেবী আতঙ্কে ভোগেন। সব হারানোর ভয় তাঁর বুকের ভিতরে মুছড়ে ওঠে। ‘‘অসমে নাকি সবাইকে তাড়াচ্ছে। আমাকেও দেবে না তো? এই বয়সে সবাইকে ছেড়ে থাকতে পারব না যে। ”

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই আতঙ্কই ধাক্কা মারছে জেলার অন্যতম বড় উদ্বাস্তু কলোনি ধুবুলিয়ার আনাচেকানাচে। কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা সনং বিশ্বাসের বয়স ৪৭ বছর। তাঁর বাবা খগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস দেশভাগের পর পরই এ পারে চলে আসেন। আতঙ্কিত তিনিও। বলেন, “বাবা যে ১৯৪৭ সালের পরপরই এ পারে চলে এসেছিলেন সেটা প্রমাণ করার মত কিছুই আমাদের হাতে নেই।” তাঁর কথায়, “ভয় তো করছেই। বিশেষ করে দিদিকে নিয়ে। দিদির বয়স এখন বাষট্টি বছর। ও পারে জন্ম। এই বয়সে না আবার আমাদের সব হারাতে হয়।” একই কথা বলছেন ধুবুলিয়ার বাসিন্দা আশুতোষ বিশ্বাস। তাঁর বাবা ১৯৪৭ সালের পর এ দেশে এসেছেন। তাঁরও কোনও প্রমাণপত্র তাঁদের কাছে নেই। তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কথায়, “বিজেপি নোংরা বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে। তা বরদাস্ত করা হবে না। কাউকেই এই দেশ থেকে তাড়ানো যাবে না।” যা শুনে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলছেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তো সংসদে বলেই দিয়েছেন যে, অসমে তালিকায় যা ত্রুটি আছে তা সংশোধন করা হবে। তা ছাড়া ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন