প্রতীকী ছবি।
নজরদারি এখন বহু গুণ বেড়েছে। কারবার করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। তাই নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার পরে কলকাতার হাওয়ালা কারবারিরা প্রতি লক্ষ টাকায় নিজেদের কমিশন ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ভোটের বাড়তি সুরক্ষাই লাভ বাড়িয়ে দিয়েছে ওই কারবারিদের!
কমিশন বৃদ্ধির খবরটা শুক্রবার মিলেছে আয়কর দফতর সূত্রেই। বৃহস্পতিবার রাতে বড়বাজার এলাকায় এক হাওয়ালা কারবারির অফিসে হানা দিয়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন আয়কর অফিসারেরা। তার আগেও বড়বাজার, জোড়াবাগান, পোস্তায় হাওয়ালা কারবারিদের আস্তানায় পরপর চারটি অভিযান চালিয়ে নগদ ১১ কোটি টাকা এবং ১৭ কোটি টাকার সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আয়কর দফতর সূত্রের খবর, কলকাতার বাণিজ্য কেন্দ্র বড়বাজার এলাকার অসংখ্য বহুতলের ঘুপচি ঘরে বসে বহু মানুষ নীরবে হাওয়ালার কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে নির্বাচনের সরাসরি কোনও যোগসূত্রের কথা স্বীকার করতে চাননি আয়কর অফিসারেরা। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের তরফে নির্বাচন কমিশনকে সব কিছু জানানো হচ্ছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এখন এত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে কী ভাবে? অফিসারদের দাবি, ভোটে নজরদারি তীব্র হওয়ায় জালে ধরা পড়ছে মাছ। তা ছাড়া মার্চ-এপ্রিলে অর্থবর্ষের সমাপ্তি ও সূচনায় এই লেনদেন বাড়ে। কলকাতার কারবারিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, সুরাত, আমদাবাদের হাওয়ালা কারবারিরা।
আয়কর দফতর সূত্রের খবর, চোস্ত হিন্দি, এমনকি মারওয়াড় ভাষা জানেন, এমন অফিসারেরা এখন ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বড়বাজার, পোস্তা এলাকায়। কেউ ব্যবসায়ীর বেশে। কেউ কেউ মজুরের সাজে। এক আয়কর-কর্তা বলেন, ‘‘এত গলিঘুঁজি! এত ছোট ঘর! ঠিক কোথায় যে এই কারবার চলছে, বোঝা মুশকিল। তবে আমাদের অফিসারেরা টাকা লেনদেনের অছিলায়, মুটে-মজুরদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে খবর তুলে আনছেন। ওখানে হাওয়ালার অধিকাংশ টাকা মুটে-মজুরের ঝাঁকায় ভরে স্থানান্তরিত হয়। নেটওয়ার্ক আছে কারবারিদেরও। সামান্য সন্দেহ হলেই তাঁরাও সতর্ক হয়ে যাচ্ছেন।’’
কী ভাবে চলছে এই ব্যবসা?
আয়কর-কর্তা জানাচ্ছেন, মনে করুন, কলকাতার এক ব্যবসায়ী সুরাতের ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লক্ষ টাকার শাড়ি পাঠালেও কাগজে-কলমে দেখানো হল দু’লক্ষ টাকার শাড়ি। বাকি ১৮ লক্ষ টাকার উপরে প্রদেয় কর ফাঁকি দিলেন দুই ব্যবসায়ী। কিন্তু শাড়ি বিক্রির টাকা সরাসরি কলকাতার ব্যবসায়ীর কাছে এল না। কর ফাঁকির টাকা মাঝপথে ধরা পড়ার ভয় থাকে। তাই সাহায্য নেওয়া হল হাওয়ালা কারবারির। ‘‘সুরাতের শাড়ি ব্যবসায়ী স্থানীয় হাওয়ালা কারবারিকে ২০ লক্ষ টাকা দেন। ওই হাওয়ালা কারবারির সঙ্গে যুক্ত কলকাতার কারবারি ২০ লক্ষ টাকা পৌঁছে দেন এখানকার ব্যবসায়ীর কাছে। এই লেনদেনে দুই শহরের হাওয়ালা কারবারি কমিশন পান ২০ হাজার টাকা,’’ বলেন ওই আয়কর-কর্তা।
একই ভাবে কলকাতার হাওয়ালা কারবারির কথায় দেশের অন্য শহরের কারবারিরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা দেন। এ ভাবে হাওয়ালার মাধ্যমে রোজ কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন হয় সারা দেশে। আয়কর-কর্তার কথায়, ‘‘বলতে পারেন, সমান্তরাল ব্যাঙ্কিং সিস্টেম চলছে।’’
প্রতি মাসের শেষে দুই শহরের দুই হাওয়ালা কারবারির মধ্যে লেনদেনের হিসেব হয়। কেউ বেশি টাকা দিয়ে থাকলে অন্য জন তাঁকে সেই টাকা পৌঁছে দেন। সেটা হয় হাতে হাতে।