হিটলার থাকলে গলায় দড়ি দিতেন, মোদীকে তীব্র কটাক্ষ মমতার

বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বুঝতেই পারছেন, এখানে জিততে পারবেন না। তাই ভোটের মুখে এমন সব কথা বলছেন, যার কোনও মানে নেই।’’

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু ও মেহেদি হেদায়তুল্লা

রায়গঞ্জ, ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আগেও হিটলার বলেছেন। এ বার বললেন আরও কড়া করে। রায়গঞ্জের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী নিজের প্রচার ছাড়া কিছু করেন না। নিজের নামে সিনেমা বানিয়েছেন। নিজের নামে দোকান বানিয়েছেন। এই ধরনের দুর্যোধন, দুঃশাসনের মন্ত্রিসভা আগে কখনও হয়নি ভারতবর্ষে। ফ্যাসিবাদের সম্রাট। ফ্যাসিবাদী সম্রাট। হিটলার বেঁচে থাকলে আজকে লজ্জায়, গলায় দড়ি কলসি নিয়ে আত্মহত্যা করতেন।’’

Advertisement

বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বুঝতেই পারছেন, এখানে জিততে পারবেন না। তাই ভোটের মুখে এমন সব কথা বলছেন, যার কোনও মানে নেই।’’

মমতা এ দিন অবশ্য প্রথম থেকেই মোদীর প্রসঙ্গে আক্রমণাত্মক ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘বাপ রে, কী সাংঘাতিক লোক। দাঙ্গার কথা ভুলে যাননি তো!’’ বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহার সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বলছে ২০৪৭ সালে তাঁদের স্বপ্ন পুরণ হবে। এটা ২০১৯ সাল। পাঁচ বছর পরপর সরকার বদলায়। অথচ তাঁরা ২০৪৭ সালের স্বপ্ন দেখছেন। মোদীবাবু তোমারও তো ১০০ বছর বয়স হয়ে যাবে। তখন তুমি কী করে স্বপ্ন দেখবে?’’

Advertisement

মমতার দাবি, বিজেপি সমস্ত শক্তি দিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে গায়ের জোরে নির্বাচন জিততে চায়। মমতা বলেন, ‘‘আমরাও রাজ্যে রাজ্যে জোট বেঁধে লড়াই করছি। যে যেখানে শক্তিশালী। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও সারা ভারতবর্ষে দেব না।’’

সভায় প্রশ্ন তোলেন মমতা, ‘‘জিজ্ঞাসা করুন, বিজেপিকে কেন ভোট দেব তোমায়? তুমি পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলে।’’

জনসভা: রায়গঞ্জ স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। ছবি: সন্দীপ পাল

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মমতা বলেন, ‘‘নোটবন্দি করে জনগণের পকেট লুটেছ। অনেক দোকানদার সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কে লাইন দিতে গিয়ে অনেকে প্রাণ দিয়েছে। আজও দেশে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে মোদীবাবু তোমাদের আমলে। ছেলে মেয়ের চাকরি দেওয়া দূরের কথা। আপনারা বলে ছিলেন পাঁচ বছরে ১০ কোটি বেকার চাকরি দেবেন। অথচ আপনার আমলে দেশে বেকার সংখ্যা ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ।’’

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, যে বিরুদ্ধে বলছে, তাকেই ভয় দেখানো হচ্ছে। মমতা বলেন, ‘‘এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছ। কাউকে সিবিআই দিয়ে, কাউকে ইডি দিয়ে। কারও বিরুদ্ধে আয়করের রেড করছ। আর নিজে নিজে একটা চোরেদের, সব নাটের গুরু বিজেপি পার্টি। চোরেদের সুরক্ষা দিচ্ছ। যত চোর ডাকাত ওই পার্টিতে আশ্রয় নিয়েছে।’’

মমতা দাবি করেন, ‘‘বিজেপি অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহারে গোহারা হারবে। ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, পঞ্জাব হারবে। তামিলনাড়ু, কেরালা, বাংলা, ওড়িশায় শূন্য পাবে। তা সরকার গড়বে কী ভাবে?’’ তিনি বলেন, ‘‘অখিলেশ যাদব আমার বন্ধু। এক সঙ্গে দেশ গড়ব।’’ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় সমাজবাদী পার্টির পতাকাও দেখা গিয়েছে।

রায়গঞ্জ এবং তার পরে ইসলামপুরের সভায় এনআরসি নিয়ে এ দিনও সরব ছিলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আপনাদের সবাইকে তাড়াবে। অসমে দেখেছেন, কত জন আত্মহত্যা করেছে দুঃখে। পরিবার, সংসার তচনচ হয়ে গিয়েছে। বলছে ৫০ বছর, ১০০ বছর আগেকার শংসাপত্র দাও। আমি নিজে অসমে টিম পাঠিয়েছিলাম। কোনও দল লড়েনি। একমাত্র তৃণমূল লড়েছে।’’ সেই সঙ্গেই মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘বলছে, বাংলায় এনআরসি করব। হাত দিয়ে দেখ। একটা বাংলার মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখ। ও সব জোর দেখা আছে। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট করে আর একটা ধাপ্পা। আপনাকে পাঁচ বছরের জন্য বিদেশি বানিয়ে দেবে। কেউ কী চায়? আপনার একটা একটা ঘর আছে সেটা কেড়ে নেবে। সব কেড়ে নেবে। তুমি কে হরিদাস ভাই?’’

ইসলামপুরে বলেন, ‘‘মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবাই ভয় পায়। আমি ওকে ভয় পাই না। আমি সারা জীবন গুলির সঙ্গে লড়াই করে এসেছি। অনেক বন্দুক দেখেছি মোদীর বন্দুককে কেন ভয় পাব?’’

মমতার কথায়, ‘‘মোদী নিজের কেন্দ্র বারাণসীতেই গঙ্গা সাফাই করেননি। ধরমশালা, দেবী চৌধুরানী মন্দির, পঞ্জাবি গুজরাতি মরাঠি হিন্দু আদিবাসীদের অনুষ্ঠান আমরা করেছি।’’ জওয়ানদের মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘জওয়ানরা দেশের, তোমার নন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন