প্রতীকী ছবি।
ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতেই বারান্দা থেকে প্রশ্নটা উড়ে এসেছিল— ‘ভোটটা দিলে কাকে শুনি?’
খোলা মনেই আনসুরা বিবি জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘কেন গো, ভাইয়ের দল কংগ্রেসকেই দিলাম এ বার।’’
আর তার জেরেই, তাঁর স্বামী, তৃণমূল সমর্থক তাহাসেন শেখ এবং পরিবারের অন্যরা আনসুরাকে বেধড়ক পিটিয়ে মুখে অ্যসিড ঢেলে দেয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে এমনই জানিয়েছে আনসুরার ছেলে রুপসান শেখ।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘটনার পরে, আশঙ্কজনক অবস্থায় আনসুরাকে ভর্তি করানো ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটলে ওই দিন রাতে তাঁকে পাঠানো হয় বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মহিলার শ্বাসনালি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে।
পরস্পরকে পছন্দ করেই নিকাহ্ করেছিলেন ইসলামপুরের কেশবপুর গ্রামের আনসুরা আর তাহাসেন। কংগ্রেসের সমর্থক দু’বাড়ির পুরনো মিলমিশ আচমকাই ধাক্কা খেয়েছিল বছর দেড়েক আগে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, রাজনীতির উঠোন ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায়, সম্পর্ক থাকলেও তাহাসেন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কারণ, আনসুরার পরিবার পুরনো দলের প্রতি আনুগত্য হারায়নি। আনসুরার দাদা মইনুদ্দিন শেখ এখন গ্রামের পরিচিত কংগ্রেস নেতা।
ভোটের আবহে দু’বাড়ির বৈষম্য যেন আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল। কংগ্রেস-তৃণমূলে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া যে লেগেই থাকত তা জানিয়েছেন পড়শিরা। তারই সূত্র ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুই পরিবারে কথা কাটাকাটি শুরু হয়েছিল। যা এক সময়ে গড়িয়েছিল হাতাহাতিতে। সেই হাতাহাতির জেরে আহত হয়েছিলেন আনসুরার দেওরের ছেলে সামসিয়ার রহমান। ঘটনাচক্রে তিনি ওই গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্য। ঝামেলা থিতিয়ে এলে ভোট দিতে যান আনসুরা। আর, ফিরে এসেই তাহাসেনের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি।
মইনুদ্দিন বলছেন, ‘‘দিদি বাড়ি ফেরার পরেই শুরু হয়েছিল অত্যাচার। প্রথমে মার, তার পর চেপে ধরে ওর মুখে অ্যসিড ঢেলে দেওয়া হয়।’’ একই অভিযোগ করেছেন রুপসানও।
রুপসান বলছেন, ‘‘মা’কে আমাদের সামনেই চুলের মুঠি ধরে পেটাচ্ছিল বাবা ও অন্যরা। আমার চাচার ছেলে সাফিয়ান এখন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। মা’কে ছাড়ানোর বদলে সেও পেটাতে থাকে। তার পরেই ঘরে ঢুকে মায়ের মুখে বোতল থেকে কি একটা ঢেলে দেয়। মা চিৎকার করতে থাকে, ‘জ্বলে গেল গো! প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বুঝলাম অ্যাসিড ঢেলেছে।’’
তবে, তাহাসেন বলছেন, ‘‘এটা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগির ঘটনা। আমি ওঁকে দু’টো চড় মেরেছি বলেই ও অ্যাসিড খেয়েছে।’’
রানিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ফিরোজা বেগম অবশ্য তা মানছেন না। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনে চমকে গিয়েছি। এক জন মহিলাকে কেবল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য এমন নারকীয় অত্যাচার করতে পারে কেউ!’’ রানিনগর ব্লক তৃণমূল সভাপতি আমিনুল হাসান বাপি অবশ্য বলেন, ‘‘নিতান্তই পারিবারিক ঘটনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলার সময় বাথরুমে গিয়ে ওই মহিলা অ্যাসিড খেয়ে নেন। তাকে এখন রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে।’’