—ফাইল চিত্র।
বঙ্গ ব্রিগেডের চাপের মুখে ঢোঁক গিলতে হল প্রকাশ কারাটকে!
কেরলের একটি মালয়ালম চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, বাংলায় এ বার বিজেপির শক্তি বাড়বে বলেই তাঁর ধারণা। বাংলায় ভোট চলাকালীন কারাটের এমন প্রকাশ্য মূল্যায়নে দলের অন্দরে প্রবল আপত্তি তুলেছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা।
তাঁদের যুক্তি, তৃণমূল ও বিজেপির জোড়া বিপদের বিরুদ্ধে তাঁরা যখন প্রাণপণ লড়াই করছেন, তখন এহেন মন্তব্যে কার্যত জমি হারানোর কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। কারাটের ওই বক্তব্যে বাংলার জনমানসে এবং দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে, তাঁদের এমন আশঙ্কার কথা এ কে জি ভবনে জানিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। জলঘোলার জেরে শেষ পর্যন্ত কারাট দলকে জানিয়েছেন, তাঁর বক্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ হয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মালয়ালম ওই চ্যানেলের প্রশ্নের জবাবে কারাট বলেছিলেন, গোটা দেশে কংগ্রেসের আসন তিন অঙ্ক ছাড়াবে বলে তাঁর মনে হয় না। তবে নরেন্দ্র মোদীর জমানার অবসান ঘটিয়ে অ-বিজেপি সরকারই কেন্দ্রে আসতে চলেছে। বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর মতামত ছিল, এখানে বিজেপি তাদের শক্তি বাড়িয়ে নিতে পারবে বলেই মনে হচ্ছে। কারাটের সাক্ষাৎকারের এই অংশটি নিয়ে সূর্যবাবুরা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, অবিলম্বে পলিটবুরো হস্তক্ষেপ করে অবস্থান স্পষ্ট করুক। ভোট চলাকালীন বিজেপি-কে এমন ‘অস্ত্র’ তুলে দেওয়াটা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন তাঁরা।
সিপিএম সূত্রের খবর, ইয়েচুরি এর পরে কথা বলেন তাঁর পূর্বসূরির সঙ্গে। বিতর্কের মুখে কারাট ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বাংলায় বিজেপির শক্তি বাড়বে— এমন কথা তিনি বলেননি। তাঁর কথার অপলাপ হচ্ছে। কারাটের দাবি, তিনি বলেছিলেন বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল দু’পক্ষই নিজেদের মধ্যে মেরুকরণ ঘটাতে সব রকম চেষ্টা করছে। বামেদের কোণঠাসা করার জন্যই দুই শাসক দলের এমন প্রয়াস। সেই চেষ্টার মোকাবিলা করেই বাংলার বাম কর্মী-সমর্থকেরা একসঙ্গে দুই শক্তির বিরুদ্ধে পূর্ণ উদ্যমে লড়াই করছেন। তার পরে প্রশ্ন ছিল, উত্তরপ্রদেশের ক্ষতি বাংলা বা ওড়িশা থেকে কি বিজেপি পুষিয়ে নিতে পারবে? কারাট বলেন, পারবে বলে তাঁর মনে হয় না। এই পূর্ণাঙ্গ বয়ান প্রকাশ্যে না এনে তাঁর কথার বিকৃত ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলেই ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে— এমনই যুক্তি কারাটের।
তাঁর বক্তব্য ও ব্যাখ্যা সংবলিত একটি লিখিত বয়ানও পলিটবুরোর কাছে দিয়েছেন কারাট। সেই বক্তব্য দেখে বঙ্গ ব্রিগেডের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া সফররত ইয়েচুরি অবশ্য দলের অন্দরের এমন বিতর্ক প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি।
দলের এক পলিটবুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বাংলায় বামেরা লড়াইয়ে নেই, এমন একটা ছবি তুলে ধরার জন্য নানা মহল থেকে সব রকম চেষ্টা চলছে। এই প্রচারের মোকাবিলা করে আমাদের লড়াইও চলছে।’’