নাগরিক পঞ্জি নিয়ে যুদ্ধং দেহি শাহ-মমতা

এ মাসের গোড়া থেকে উত্তরবঙ্গে প্রচার শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার রায়গঞ্জে এসে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে এ রাজ্যে এক জনের গায়েও হাত দিয়ে দেখান।’’

Advertisement

রবিশঙ্কর দত্ত

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৮
Share:

রায়গঞ্জের সভায় অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

নাগরিক পঞ্জি নিয়ে তুমুল বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন অমিত শাহ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি শাহ বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের জনসভা থেকে হুঙ্কার দেন, ‘‘মমতাজি সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দিলেও এনআরসি ঠেকাতে পারবেন না। অসমের মতো এ রাজ্যেও নাগরিক পঞ্জি হবেই। অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে।’’ এ দিনই দার্জিলিঙের জনসভা থেকে আর এক বার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘‘বাংলায় এনআরসি হতে দেবো না।’’

Advertisement

এ মাসের গোড়া থেকে উত্তরবঙ্গে প্রচার শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার রায়গঞ্জে এসে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে এ রাজ্যে এক জনের গায়েও হাত দিয়ে দেখান।’’ নাগরিক পঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েও একাধিক বার বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবার সেই রায়গঞ্জেই দলের নির্বাচনী সভায় শাহ বলেন, ‘‘বাংলায় এনআরসি (নাগরিক পঞ্জি) হবেই।’’ এই প্রসঙ্গেই বিজেপির প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ব্যাখ্যা করে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘বাঙালি শরণার্থীদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং খ্রিস্টান ধর্মের যে-সব মানুষ অত্যাচারিত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা আমাদের সহোদর। তাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন। তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’’

নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছেন মমতা। অসমে বিজেপির বিরুদ্ধে বঙ্গভাষী হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগও একাধিক বার তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সংসদেও প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গে ভোট চাইতে এসে শাহ বলেন, ‘‘ভয় পাবেন না। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান শরণার্থীদের আমরা এ দেশের সন্তান বলেই মনে করি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে উঠলেই তৃণমূলের সাংসদেরা চেঁচামেচি করেন।’’ কটাক্ষের সুরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘অনুপ্রবেশকারীরা কি আপনাদের চাচাতো ভাই? তৃণমূল মানেই অনুপ্রবেশে মদতদাতা।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিন শাহকে পাল্টা কটাক্ষ করে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘উনি যতই হুঙ্কার দিন, বাংলায় কারও ক্ষমতা নেই নাগরিক পঞ্জি চালু করবে। বাংলার মানুষ বিভেদের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেন না। আমরা আগেও প্রতিবাদ করেছি, এখনও করছি এবং পরেও করবো। মানুষ ওই দাঙ্গাবাজকে উচিত শাস্তি দেবে।’’

গত কয়েক মাসে একাধিক বার রাজ্যে এসেছেন শাহ। এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তাঁদের প্রায় প্রতিটি বক্তৃতায় নাগরিকত্ব বিল এবং নাগরিক পঞ্জির প্রসঙ্গ এসেছে। এসেছে অনুপ্রবেশকারী বিতারণের প্রসঙ্গ। সে-দিক থেকে শাহের এ দিনের বক্তৃতা নতুন নয়। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রায়গঞ্জের মতো সীমান্ত অঞ্চলে এসে শাহ যে-ভাবে ‘মেরুকরণে’র তাস ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘আক্রমণ’ করলেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ। শাহের বক্তৃতায় এ দিন এসেছে দাড়িভিট প্রসঙ্গও। সরস্বতী পুজো, দুর্গাপুজোর কথাও বলেছেন চেনা ঢঙে। এসেছে কেন্দ্রের দেওয়া টাকা ‘তছরুপে’র অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘মোদী সরকার পাঁচ বছরে রাজ্যকে ৪ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। তৃণমূল সেই টাকা খেয়েছে।’’

২০১৪ সালের ভোটের আগে ব্রিগেডে সভা করতে এসে দু’হাতে লাড্ডুর কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আর এ দিন সেই অবস্থান বদলে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘কলকাতায় তৃণমূলের ক্ষমতার ট্রান্সফর্মার জ্বলে গিয়েছে। এটা তুলে না-ফেললে এখানে কিছু হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন