সিপি বদলি নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতার কড়া চিঠি কমিশনে, দাবি পুনর্বিবেচনার

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে এ দিন চিঠিটি পাঠিয়েছেন মমতা। প্রতিলিপি কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরে। সেই দফতর চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৬
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার-সহ চারজন আইপিএস অফিসারকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে কড়া চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, কমিশনের এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত একতরফা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই কমিশন এমন পদক্ষেপ করেছে। চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি’র ‘আদেশে’ কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

Advertisement

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে এ দিন চিঠিটি পাঠিয়েছেন মমতা। প্রতিলিপি কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরে। সেই দফতর চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছে।

শুক্রবার বেশি রাতে নির্দেশনামা জারি করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ, বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ এবং ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগানকে অপসারণ করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও দায়িত্বে তাঁদের না রাখার নির্দেশও দেয় তারা। মুখ্যমন্ত্রী এখন নির্বাচনী সফরে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। খবর পেয়েই তিনি তাঁর দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কথা বলেন দিল্লির কয়েকজন বিরোধী নেতার সঙ্গেও। ওই রাতেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বিষয়টিকে পুরোপুরি রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করা হবে। সরাসরি চিঠি লিখে আঙুল তোলা হবে নির্বাচন কমিশনের ‘পক্ষপাতমূলক’ ভূমিকার দিকে। তা নিয়ে তদন্তের দাবিও তুলেছেন মমতা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শনিবার আলিপুরদুয়ারের বারভিশার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি চায় সব অফিসারকে বদলে দিতে। আগে আমায় বদলাও। বিজেপি বলেছে তাই সব ভাল অফিসারদের বদলে দিয়েছে। এঁরা আমাদের অফিসার। যাঁদের এনেছে, তাঁরাও আমাদেরই অফিসার। আমি দেখে নেব। আমার উপর এত রাগ! আমাকে যত আক্রমণ করবে, আমি তত এগিয়ে যাব। আমার কিছু করতে পারবে না। লড়তে পারলে লড়ুন। করতে পারলে করুন। না হলে দড়ি-কলসি নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে জলে ডুবে দেখুন, কোথায় আছেন। কাকে চমকাচ্ছ, কাকে ধমকাচ্ছ? গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আমি লড়াই করি। গুলির সামনে লড়াই করেই বেঁচে আছি। জানবে আমাদের এখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে। মনে রাখবেন। এত সহজ নয়।’’

অন্যদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন রাজ্যে স্বচ্ছ পুলিশ অভিযান করেছে। এর জন্য কমিশনকে আমরা ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমাদের অনুরোধ, আরও যে সব পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি, তাঁদেরও যেন পদ থেকে সরানো হয়।’’

নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে দেখতে বলেন মমতা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে লেখা দীর্ঘ চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কয়েকদিন আগে বিজেপি নেতারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, পুলিশ প্রশাসনের সিনিয়র কয়েকজন অফিসারকে বদল করবে কমিশন। প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি’র প্রার্থী একটি টেলিভিশন চ্যালেনে মন্তব্য করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ বলেই সাত দফায় নির্বাচন করাতে হচ্ছে সেখানে। ঠিক তার পরেই সংশ্লিষ্ট অফিসারদের অপসারণের নির্দেশিকা কমিশনের থেকে পায় রাজ্য প্রশাসন। চিঠিতে মমতা সন্দেহপ্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, কমিশন তার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পালন করছে, না কি তারা কেন্দ্রের শাসক বিজেপি’কে তুষ্ট করার কাজ করছে। কলকাতা এবং বিধাননগরে দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ অফিসারেরা কড়া হাতে আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলা করছিলেন বলেই তাঁদের বদলি করা হল। যাঁদের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ওই এলাকা এবং সেখানকার মানুষের সম্পর্কে তাঁদের সম্যক ধারণা নেই। এ বার রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে নির্বাচন কমিশন কি— সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।

আইনশৃঙ্খলা যে রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, তা ফের একবার মনে করিয়ে দিয়ে মমতা চিঠিতে লিখেছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। বদলি করার আগে রাজ্যের থেকে অফিসারদের নামের তালিকা চাওয়ার রীতি মানা হয়নি। তা মানা হলে উপযুক্ত অফিসারদের নামের তালিকা রাজ্য পাঠাতে পারত, যাঁরা ওই এলাকা সম্পর্কে অভিজ্ঞ। তাতে তাঁরা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন।

যদিও অভিজ্ঞ এবং প্রবীণ আমলাদের অনেকেরই ব্যাখ্যা, নির্বাচনকেন্দ্রিক বদলির প্রশ্নে রাজ্যের মতামত না-ও নিতে পারে কমিশন। তাদের হাতে থাকা ‘সিভিল লিস্ট’ থেকেই অফিসার বেছে নিয়ে সরাসরি নিয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন সদনের।

কমিশনের অপসারিত পুলিশকর্তাদের এ দিনই নতুন পদে বহাল করেছে রাজ্য। অনুজ শর্মা হয়েছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (অপারেশসন্স) এবং জ্ঞানবন্ত সিংহ হয়েছেন রাজ্যের আর্থিক অপরাধদমন শাখার অধিকর্তা। দুই অপসারিত এসপি রাজ্য সশস্ত্র পুলিশে বদলি হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন