—ফাইল চিত্র।
মোদীর শব্দেই তাঁকে জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই ‘গুন্ডা’ বলে সম্বোধন করলেন।
বুধবার বীরভূমে এসে মোদী বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ‘গুন্ডাতন্ত্র’ চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সেই বীরভূমের সিউড়িতে দাঁড়িয়েই মমতার পাল্টা, ‘‘আমি গুন্ডা হলে আপনি কি নরেন্দ্র মোদী? আমার হাতে কখনও দাঙ্গা হয়নি। আমি খুনের রাজনীতি করি না। ২০০২ এর কথা ভুলে গেছেন? দাঙ্গার কথা?’’ এর পরেই তাঁর হুংকার, ‘‘কেউ ভয়ে কথা না বললেও আমি বলে যাব। যতক্ষণ না গলা কেটে নেবে। আমি মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব। ওঁকে ক্ষমা করব না।’’
এ দিন রাজ্যে দু’টি সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে বীরভূম পরে দুর্গাপুরে। বীরভূমের সভায় গোড়া থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা। বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘গতকাল প্রধানমন্ত্রীর মিটিং ছিল বোলপুরে। আমাদের গুন্ডা-টুন্ডা বলেছে। বলছে, শান্তিনিকেতনে গুন্ডা তৈরি করেছি। মাথা ঠিক আছে তো? পরীক্ষা করানো উচিত। কবিগুরুর কর্মভূমি এটা। মোদীবাবু আপনি হোমওয়ার্কও করেন না। কোথায় কী বলতে হয় তা-ও জানেন না। এটা শান্তির শান্তিনিকেতন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এর পরেই বিজেপি এবং আরএসএস-কে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ওদের পার্টির ক্যাডাররা কেবল হিন্দু-মুসলিমের ভাগ করে। ওরা ঠাকুরকে রাস্তায় বিক্রি করে। ইলেকশন এলেই হিন্দু হিন্দু করে চিৎকার করে।’’ মমতার দাবি, বিজেপি এবং আরএসএসের কর্মীরা মাথায় ফেট্টি বেঁধে হাতে তরোয়াল এবং গদা নিয়ে রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এ ভাবে বাংলার মানুষকে চমকানো যাবে না। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়।’’ এ প্রসঙ্গেই দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তৃণমূলনেত্রী বলেন, বিজেপি বাইরে থেকে লোক এনে রাজ্যে বাক্স বাক্স টাকা বিলিয়ে ভোট করানোর চেষ্টা করছে। নজর রাখতে হবে। পরে দুর্গাপুরের জনসভাতেও একই সতর্কবার্তা দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘বাংলার মাটিকে চমকানো যায় না। এই মাটি দাঙ্গা বরদাস্ত করে না।’’
বীরভূমে বক্তৃতার প্রায় শেষ পর্বে পৌঁছে গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মমতা। মোদীকে গোধরার কথা, উত্তরপ্রদেশের দাঙ্গার কথা
মনে করিয়ে দিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘ওঁর রক্তচক্ষু দেখে কেউ ভয়ে কথা বলে না। শুধু আমি বলি। তাই আমার ওপর এত রাগ। আমি সিপিএম আমলে গুলির সামনে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করেছি। প্রচুর মার খেয়েছি। নরেন্দ্র মোদীকে কী ভয় পাব? পাগলা কুকুর কামরালে জলাতঙ্ক হয়। ওঁরা হারাতঙ্কে ভুগছেন। উনি বার বার বাংলায় আসছেন, কারণ উনি জানেন, লড়াই দিলে একমাত্র এই মেয়েটাই দেবে। তাই এত ভয়।’’
‘গুন্ডাতন্ত্রে’র জবাবের পাশাপাশি এ দিন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বীরভূম এবং দুর্গাপুরে রাজ্য সরকারের কাজের ফিরিস্তিও দেন মমতা। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, পাঁচ বছরে রাজ্যকে কেবলই ‘বঞ্চনা’ করেছে মোদী সরকার। নোটবন্দি, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কী ভাবে দেশের মানুষকে ‘সমস্যা’য় ফেলেছে প্রতিদিনের মতো সে প্রসঙ্গও এ দিন তাঁর বক্তৃতায় একাধিক বার এসেছে।