আকাশে চোখ: বুধবার কান্দিতে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
সভা শেষে ওঁরা বেশ হতাশ।
কেউ গামছা দিয়ে কপালের বিনবিনে ঘাম মুছতে মুছতে বলছেন, ‘‘ধুস! ভাবলাম এক, হল আর এক!’’
কেউ ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ছুড়ে দিলেন, ‘‘আখের রস বিক্রি হল সাকুল্যে দু’গেলাস!’’
কেউ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘ভোট-পাখির মুখে ছাই! ওই শত্তুরটার জন্যই তো সব মাঠে মারা গেল।’’
বুধবার কান্দি ও জঙ্গিপুরে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে জনসভা ছিল তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জঙ্গিপুরের বড়শিমুল মাঠে এ দিন সকাল থেকেই বসে গিয়েছিল আখের রস, মশলা মুড়ি, জলের বোতল, ফুচকা, চা বিস্কুট, ঘুগনি, শশা ও তরমুজের স্টল।
মমতার হেলিকপ্টার যখন বড়শিমুল মাঠের আকাশে পাক খেল তখন তেজ কমতে শুরু করেছে দুপুরের রোদের। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই এ দিন ক্রেতারা তেমন কিছু খাওয়ার দিকে ঝুঁকছিলেন না। তবুও যে ক’জন এটা-ওটা খাচ্ছিলেন, হেলিকপ্টারের আওয়াজ পেতেই সকলেই ভিড় জমালেন হেলিপ্যাডের দিকে।
তার পরেই শুরু হয় সভা। মিনিট চল্লিশের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তার পরে ফের ভোটপাখি গর্জে উঠতেই ভিড়ও ছুটে চলে সেদিকেই। আয়োজনই সার। ব্যবসায়ীরা বাড়ি ফিরলেন বেজার মুখে।
পিয়ারাপুরের অধীর সরকার এসেছিলেন আখের রস নিয়ে। তিনি বলছেন, ‘‘গত বিধানসভায় রাহুল গাঁধীও এই মাঠেই হেলিকপ্টারে এসেছিলেন। সে বার সভা শেষ হওয়ার আগেই সব আখ ফুরিয়ে গিয়েছিল। আর এ বার সাকুল্যে দু’গেলাস রস বিক্রি হয়েছে। বাকি সব ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’’
বাউরার সুব্রত হালদার মশলা মুড়ি ও ঘুগনির দোকান দিয়েছিলেন। তাঁর অবস্থাও তথৈবচ! তিনি বলছেন, ‘‘এ বারে যে এমন অবস্থা হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। মমতার সভায় এমনিতেই ভাল ভিড় হয়। হেলিকপ্টার এলে তো কথাই নেই। ভিড় আরও বাড়ে। কিন্তু এই প্রথম বার দেখলাম, গোটা ভিড়টাই টেনে নিল মমতা আর তাঁর বাহন। আমাদের কপালে লবডঙ্কা!’’
তবে বিক্রেতাদের একাংশের মত, এ দিনের সভা শুরু হয়েছে বেলায়। ফলে সকলেই দুপুরে স্নান-খাওয়া সেরেই সভায় এসেছিলেন। বড়শিমুলের রবিউল শেখ চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। তিনিও বলছেন, ‘‘সকলেরই তো পেট ভর্তি। বাইরে খাওয়ার ঝোঁক ছিল না। অন্য সময় হলে কাপের পর কাপ চা উড়ে যেত।’’
কান্দির ছবিটা অবশ্য কিঞ্চিৎ আলাদা। কারণ, এ দিন জঙ্গিপুরের আগেই মমতার সভা ছিল কান্দিতে। ফলে সেখানে যাঁরা দোকান দিয়েছিলেন তাঁদের বিকিকিনি বেশ ভালই হয়েছে। জঙ্গিপুরের মতো খুব বেশি দোকান সেখানে বসেনি। ছিল কেবল ঝালমুড়ি আর আইসক্রিমের স্টল। আইসক্রিম বিক্রেতা প্রশান্ত পাল বলছেন, ‘‘সব আইসক্রিম ফুরিয়ে গিয়েছে। থাকলে আরও বিক্রি হত।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজনৈতিক সভায় বহু বছর থেকে দোকান দিচ্ছেন প্রশান্ত। তাঁর অভিজ্ঞতাও বেশ দীর্ঘ। তিনি বলছেন, ‘‘দূর দেখে দেখতে একই রকম মনে হলেও এই সব সভা আর মেলার মাঠ কিন্তু এক নয়। বক্তা ছাড়াও এলাকার মানুষের সবথেকে বড় আকর্ষণ থাকে হেলিকপ্টার। ফলে কোন সময়ে সভা হচ্ছে সেটা মাথায় রাখতে হয়। অসময়ে সভা হলে বক্তা আর হেলিকপ্টারেই সব ভিড় টেনে নেবে।’’
সে আর বলতে!