মমতার গণতন্ত্রের থাপ্পড় কটাক্ষের জবাব মোদীর। —ফাইল চিত্র
বাংলায় এসে ‘মোদীবাবুরা’ তৃণমূলকে ‘তোলাবাজ’ বললে তাঁর ইচ্ছে করে ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ দিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের জবাব এ বার দিলেন নরেন্দ্র মোদী। ‘দিদির থাপ্পড়’ তাঁর কাছে ‘আশীর্বাদ’ বলে মন্তব্য করে মোদী বৃহস্পতিবার একইসঙ্গে তীব্র আক্রমণও করেছেন মমতাকে। পুরুলিয়ার জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রীকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা, এই থাপ্পড় চিট ফান্ডে জড়িতদের, তোলাবাজদের মারতে হত। তা হলে তৃণমূলের এই দুর্দিন আসত না।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বের শুরু থেকেই এ রাজ্যে এসে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করে আসছেন। তার জবাবেই মঙ্গলবার পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির সভায় মমতা বলেন, ‘‘মোদীবাবুরা যখন বাংলায় এসে বলেন তৃণমূল তোলাবাজ, মনে হয় ঠাটিয়ে একটা গণতন্ত্রের থাপ্পড় দিই।’’ মমতার এই মন্তব্যের পরই বিজেপির শীর্ষ মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বুধবারই টুইটে মমতাকে আক্রমণ করে সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘‘মমতা সব সীমা লঙ্ঘন করেছেন।’’ নিন্দা করেছিলেন বিজেপির অন্য নেতা-নেত্রীরাও।
কিন্তু মোদী জবাব দিতে বেছে নিলেন বাংলার মঞ্চকেই। পুরুলিয়ায় নির্বাচনী সভায় স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই মমতাকে ‘দিদি’ সম্বোধন করে শুরু করেন আক্রমণ। বলেন, ‘‘মমতা দিদি, আমি শুনলাম আপনি আমাকে থাপ্পড় মারতে চেয়েছেন। মমতা দিদি, আপনাকে আমি দিদি বলে ডাকি, সম্মান করি। আপনার থাপ্পড়ও আমার কাছে আশীর্বাদ হিসেবে আসবে।’’ এ পর্যন্ত কার্যত মমতাকে কটাক্ষের ভঙ্গিতেই কথা বলছিলেন মোদী।
এর পরই নিজের মেজাজে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। যে তোলাবাজি নিয়ে আক্রমণের জেরে মমতা ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ মারতে চেয়েছিলেন, সেই তোলাবাজির অভিযোগই ফিরিয়ে দিয়েছেন মোদী। সঙ্গে জুড়ে দেন চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে রাজ্যে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়ানোর প্রসঙ্গও। ‘থাপ্পড়’ কটাক্ষই ফিরিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে চিট ফান্ডের নামে আপনার যে সঙ্গী-সাথীরা গরিবের টাকা লুঠ করেছে, তাঁদের থাপ্পড় মারার সাহস দেখালে আজ এত ভয় পেতে হত না। যারা তোলাবাজি করছে, তাদের থাপ্পড় মারার হিম্মত থাকলে আজ এ ভাবে আপনাকে বরবাদ হতে হত না।’’
আরও পডু়ন: নৌবাহিনীর জাহাজে সপরিবার প্রমোদ ভ্রমণ, রাজীব গাঁধীকে ফের আক্রমণ মোদীর
আরও পডু়ন: ‘বিজেপির জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল রাজীবকে’, মোদীকে পাল্টা তোপ আহমেদ পটেলের
শব্দ নিয়ে কারিকুরি করতে বরাবরই সিদ্ধহস্ত মোদী। তৃণমূলের স্লোগান ‘মা মাটি মানুষ’কেও সেই শব্দের মারপ্যাঁচেই পুরুলিয়া থেকে আক্রমণ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘সন্তান হারানোর শোকে বাংলার মা আজ কাঁদছেন। গণতন্ত্রপ্রেমী নির্দোষ নাগরিকের রক্তে লাল রঙে বদলে গিয়েছে মাটি। আর মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাঁচতে বাধ্য হচ্ছেন।’’
তবে এ দিন মোদীর সভায় কিছুটা বিশৃঙ্খলাও ছড়িয়েছে। তার জন্য মোদীকে দু’-এক বার বক্তব্য সামান্য সময়ের জন্য থামাতেও হয়েছে। সমাবেশে আসা লোকজনের জন্য যে চেয়ার রাখা হয়েছিল। ফলে জায়গা কমে যায়। তার জন্য বিজেপি কর্ম-সমর্থকরা সেগুলি মঞ্চের সামনের খালি জায়গায় পাঠাতে শুরু করেন। মোদী তখনও মঞ্চে। সেই নিয়েই কিছুটা ছন্দপতন হয় মোদীর সভার।