তালিমে ব্যস্ত বিজয় মাহাতো (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র ।
পরিবর্তনের বছরে তিনি ছিলেন প্রতিপক্ষ। সেই ‘ঝুমুর সম্রাট’ বিজয় মাহাতোর কাঁধেই এ বার তৃণমূলের ভোটের গানের ভার।
এক সময় জঙ্গলমহলের মাটিতে যাঁদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, তাঁদের ভোটের গানের দায়িত্ব নিলেন কেন?
বিজয় বলছেন, ‘‘জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে সুচিকিৎসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সাহায্য নিতে হয়েছে। আমি এখন অনেকটা সুস্থ। মাস দুয়েক পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তত্ত্বাবধানে বাইপাস সার্জারি হবে কলকাতায়। নৈতিকতার দায় থেকেই এই পরিকল্পনা।’’
২০১১ সালে ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় পদ্ম প্রার্থী হয়েছিলেন বিজয়। হেরেও গিয়েছিলেন। সেই বিজয়ের তত্ত্বাবধানেই এখন চলছে গানের তালিম। নবীন প্রজন্মের ঝুমুর শিল্পীরা গলা তুলছেন— ‘চৌকিদার তুই চলে যা/সাহেব দেশে চলে যা /তোকে গরিব দেশে মানাঞছে নাই রে’ কিংবা ‘ভোট দাও জোড়াফুলে/জয় মা দুর্গা বলে/নিজের পায়ে মারলে কুড়ার দেশটা যাবেক রসাতলে।’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
টানা সাড়ে তিন দশক ঝুমুর গানের আকাশে জ্যোতিষ্ক বছর চৌষট্টির বিজয়। তাঁর গানে জঙ্গলমহলের মূলবাসী মানুষের জীবন-যন্ত্রণা তুলে ধরেন বিজয়। সেই লোকায়ত সুরেই বাঁধা হচ্ছে তৃণমূলের ভোটের গান। ঝাড়গ্রাম শহরের মধুবনে শিল্পীর বাড়িতে চলছে মহড়া। অসুস্থতার জন্য বিজয় নিজে গাইছেন না। তরুণ শিল্পীদের গান তোলাচ্ছেন।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পরে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বিজয়। সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চেও দেখা যায়নি তাঁকে। চলতি বছর জানুয়ারিতে জঙ্গলমহল উৎসবে অবশ্য গান শোনানোর ডাক পান বিজয়। তারপর ১৮ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন শিল্পী। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের দিন সাতেক থাকার পরে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়। চিকিৎসার সাহায্যে এগিয়ে আসেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা রাজেশ মাহাতো। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে সহায়তা চান রাজেশ। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কলকাতায় বিজয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এসএসকেএমে চিকিৎসার পরে বাড়ি ফেরেন বিজয়। তবে ভারী কাজ করা বারণ, গলা চড়িয়ে গান গাওয়াও মানা।
কিন্তু যে দল এক সময় তাঁকে প্রার্থী করেছিল, শিল্পীর অসুস্থতার সময় তারা পাশে দাঁড়াল না কেন?
বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর জবাব, ‘‘বিজয় খুব ভাল মানুষ। সে জন্যই দল ওঁকে প্রার্থী করেছিল। তবে শিল্পীর যে সাহায্য প্রয়োজন, সেটা আমরা জানতাম না।’’
এ দিকে, তৃণমূল প্রচারে বিজয়ের গান ব্যবহারের প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। জঙ্গলমহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনীসভাতেও বিজয়ের ভোটের গান শোনানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। দলের জেলা আহ্বায়ক উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘বিজয় মাহাতো আমাদের গর্ব। উনি ভোটের গানগুলো দারুণ পরিকল্পনা করেছেন। আমরা নির্বাচনী সভায় ওই গান শোনাব।’’
বিজয়ের বাড়িতে তাই তালিম চলছে জোরকদমে— ‘তোকে গরিব দেশে মানাঞছে নাই রে/ইক্কেবারে মানাঞছে নাই রে’।