প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি অনুপম, ‘প্রশ্নের’ মুখে শাসক

তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, তার জেরে এ বার প্রচারে বেরিয়ে কয়েক জায়গায় ‘জবাবদিহি’র মুখে পড়তে হয়েছে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালকেও।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share:

কলেজের উন্নয়নে অনুদান থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ— গত লোকসভা ভোটের আগে প্রচারে এসে এমনই একের পর এক আশ্বাস ভোটারদের দিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বোলপুরের বিদায়ী সাংসদ অনুপম হাজরা।

Advertisement

তাঁর দেওয়া সে সব প্রতিশ্রুতির কিছুই এখনও পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ ওই কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অনেকেরই। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, তার জেরে এ বার প্রচারে বেরিয়ে কয়েক জায়গায় ‘জবাবদিহি’র মুখে পড়তে হয়েছে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালকেও। শাসকদলের নেতাদের কয়েক জন এ কথা মেনেছেন। তবে অসিতবাবু বলছেন, ‘‘মানুষ অনুপমবাবুকে ভুলেই গিয়েছেন।’’

গত লোকসভা ভোটের আগে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া কলেজ মাঠে প্রচারে এসেছিলেন অনুপমবাবু। সভায় ছিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ সহ জেলা ও ব্লকস্তরের নেতারা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কয়েক জন এলাকাবাসী জানান, বক্তব্য রাখতে গিয়ে কলেজ মাঠের পাশে অর্থাভাবে থমকে থাকা কলেজ ভবন দেখিয়ে অনুপমবাবু জানিয়েছিলেন, ভোটে জিতলে তিনি কলেজ ভবন তৈরির কাজ শেষ করবেন। সভায় হাজির এলাকার কয়েক জন আর্জি জানান— ‘ওই কলেজ লাগোয়া ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন কোনও চিকিৎসক নেই। মানুষকে হাতুড়ের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে।’ সেই কথা শুনে অনুপমবাবু মঞ্চে উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের দাবি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ।

কলেজ পরিচালন কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সুভাষচন্দ্র ঘোষের অভিযোগ, ‘‘অনুপমবাবুর প্রতিশ্রুতি শুনে কলেজের পক্ষে সাংসদ তহবিলের অনুদান পেতে প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খরচ করে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরিই সার হয়েছিল। সাংসদ তহবিলের কোনও অনুদান মেলেনি।’’

অভিযোগ, ঢেকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র পায়নি চিকিৎসকও। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল, অনুপ দাস বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঁচ বছরেও চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা হয়নি। এ বার প্রচারে আসা শাসকদলের নেতাদের প্রশ্ন করেও তার সদুত্তর মেলেনি।’’

শুধু কলেজের উন্নয়নের জন্য অনুদান বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ—কলেশ্বর ও কোটাসুর মদনেশ্বর শিবমন্দির ঘিরে পর্যটনক্ষেত্র তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন অনুপমবাবু। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পর্যটনক্ষেত্র তৈরির কাজ দূর, জেতার পরে অনুপমবাবুকে এলাকায় দেখা যায়নি।

সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়ে এ বারের ভোটে পদ্ম-প্রতীকে যাদবপুর কেন্দ্রে লড়তে নামা অনুপমবাবু অবশ্য বোলপুরের ওই এলাকার মানুষের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারার দায় তৃণমূল নেতাদের উপরেই চাপিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইচ্ছা থাকলেও ওই দলের নেতাদের জন্য কিছু করতে পারিনি। রাজনৈতিক ভাবে আমাকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছিল। আমার সাংসদ তহবিলের টাকা খরচের কথা এত দিন জানতামই না। ওই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হয়েছে, তাও বলতে পারব না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সাংসদ তহবিলের টাকায় কোনও প্রকল্প করা হলে সংশ্লিষ্ট সাংসদকে দিয়ে তার উদ্বোধন করানো হয়। তাঁর নামে ফলকও লাগানো হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি।’’

এ বিষয়ে অসিতবাবু বলেন, ‘‘অনুপম হাজরা ভোট নিয়ে মানুষের কথা ভুলে গিয়েছেন। মানুষও তাঁকে আর মনে রাখেনি। রাজ্য এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। এক জন সাংসদ কী করলেন, না করলেন তাতে কিছু এসে যায় না। আমাকে কেউ এ বিষয়ে কেউ তেমন কিছু বলেননি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তৃণমূলকেই ভোট দেবেন।’’ তবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচনে জেতার পরে উনি দিল্লিবাসী হয়ে পড়েছিলেন। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি। সে জন্য আমাদের কোথাও কোথাও জবাবদিহি করতে হচ্ছে ঠিকই, তবে আসল বিষয়টি আমরা মানুষকে বোঝাতে পেরেছি।’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘ভোটের জন্য ওরা যে কত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে তা তো এখন মানুষই বলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন