লালবাজার। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এক বৈঠকে শহর শান্তিপূর্ণ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার। অথচ প্রাক-নির্বাচনী বৈঠকে দাগি দুষ্কৃতীদের ঠান্ডা রাখার কী দাওয়াই হবে, তাঁর মুখ থেকে শোনা যায়নি বলেই পুলিশের একটি সূত্রের মত। প্রসঙ্গত, আগামী রবিবার ভোটের দিন কলকাতায় গোলমাল রুখতে পুলিশকে কড়া হতে বলেছিল কমিশন। অনুজ শর্মাকে সরিয়ে রাজেশ কুমারকে পুলিশ কমিশনার (সিপি) পদে নিযুক্ত করেছিল কমিশনই। তা সত্ত্বেও সিপি কেন দুষ্কৃতী দমনে কড়া দাওয়াইয়ের কথা বললেন না, সে প্রশ্ন পুলিশের একাংশেরই।
যদিও লালবাজারের কর্তাদের একাংশের যুক্তি, দুষ্কৃতী রুখতে যা যা পদক্ষেপ করার তা ইতিমধ্যেই হয়েছে। শেষ লগ্নের বৈঠকে নতুন দাওয়াইয়ের কথা বলার ছিল না। শান্তিপূর্ণ ভোটের নির্দেশই আসল। নিজেদের এলাকা কী ভাবে ‘ঠান্ডা’ রাখতে হবে, তা থানার অভিজ্ঞ ওসি-রা ভাল করেই জানেন।
বুধবার রাতে কলামন্দিরে বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন সিপি এবং লালবাজারের অন্য পদস্থ কর্তারা। পুলিশের খবর, ওই বৈঠকে কমিশনের নির্দেশ ও নিয়ম মেনে সিপি শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করানোর নির্দেশ দেন। বাহিনীর সহকর্মীদের প্রতি তাঁর আস্থার কথাও জানান। ঘটনাচক্রে, আগের বিভিন্ন ভোটে গোলমাল করেছে, এমন মস্তানবাহিনী শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও সক্রিয়। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে সিপি বা অন্য পুলিশকর্তা ওই মস্তানদের নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করেননি। অধস্তন অফিসারেরাও বাহিনীর কর্তাদের কাছে জানতে চাননি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজীব কুমারকে সরিয়ে সৌমেন মিত্রকে কলকাতার সিপি পদে নিয়োগ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সৌমেনবাবুর নেতৃত্বে সে বার কলকাতা পুলিশ আক্ষরিক অর্থেই শান্তিপূর্ণ ভোট করিয়েছিল কলকাতায়। ভোট মিটতেই সৌমেনবাবু সিপি পদ থেকে অপসারিত হন। সেই সঙ্গে কলকাতা থেকে আরও এক গুচ্ছ অফিসারকে প্রত্যন্ত জেলাগুলিতে বদলি করা হয়। ঘটনাচক্রে, ওই অফিসারেরা ভোটের সময়ে গুন্ডাদমনে সক্রিয় ছিলেন। পুলিশের একাংশের দাবি, ওই বদলির ‘খাঁড়া’র ভয়েই এ বার সক্রিয় হতে ইচ্ছুক নন অনেক পুলিশ আধিকারিকই।
এই প্রসঙ্গেই পুলিশের একাংশ মনে করাচ্ছে, অনুজ শর্মাকে রাজ্য সিপি পদে বসিয়েছিল। তাঁকে সরিয়ে রাজেশ কুমারকে সিপি করায় শাসক দল ও প্রশাসনের শীর্ষ মহল বিষয়টি ভাল চোখে নেয়নি। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই কলকাতার সিপি-কে ‘বিজেপির লোক’ বলে মন্তব্য করেন। পুলিশের নিচুতলার মধ্যেও সেই মন্তব্য ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। উত্তর শহরতলির একটি থানার অফিসার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘‘বর্তমান সিপি-কে তো নির্বাচন কমিশন বসিয়েছে। আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌমেনবাবুর মতো তিনিও অতিসক্রিয় হবেন কি না, সন্দেহ থাকছে।’’
এই বিতর্কে লালবাজার সরাসরি ঢুকতে চাইছে না। তারা বলছে, এলাকায় হাঙ্গামা থামাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘কুইক রেসপন্স টিম’-এ এক জন করে দক্ষ কনস্টেবল এলাকা চেনানোর দায়িত্বে থাকবেন। তিনিই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এলাকার রাস্তা চেনাবেন। এর বাইরে প্রতিটি ‘সেক্টর মোবাইল’ বাহিনীকে ৪-৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরের দায়িত্ব সামলাতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, আজ, শুক্রবার থেকে ওই দুই বাহিনীকে রাস্তায় নামানো হবে।