নেট দুনিয়ায় ভাইরাল সেই মিম।
ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু। ব্যোমকেশ-অজিত। শবর-নন্দ।
উপন্যাস থেকে এই জুড়িদের গোয়েন্দাগিরি এসেছে সিনেমার পর্দাতেও। সেই সব ছবির নানা দৃশ্যই রসদ যোগাচ্ছে রাজনীতির রঙ্গেরও।
ভোটের বাজারে মজার ছলে বানানো মিম-এর ছড়াছড়ি ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে। বাংলায় অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতির বিষয়ক নানা মিম-এও আধিক্য বাঙালি গোয়েন্দাদের। জয় বাবা ফেলুনাথে চোখে দূরবীন লাগিয়ে গঙ্গার দিকে দেখার দৃশ্য এ ক্ষেত্রে ‘সুপারহিট’।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ওই এক দৃশ্য ব্যবহার করেই নানা বিষয়ের মিম রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সিনেমার পর্দায় ব্যোমকেশ-অজিত ও শবর-নন্দের কথোপকথনের নানা দৃশ্য ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে মিম। একই দৃশ্যকে একাধিক মিম-এ ব্যবহার করছেন নানা রাজনৈতিক দলের সমর্থকেরা। রাজনীতির নানান বিষয় আসছে মিম-এ, সেই বিষয় দেশের রাজনীতিকে প্রাসঙ্গিক হোক, বা রাজ্যের।
কিন্তু রাজনীতি বিষয়ক মিম-এ এমন ‘গোয়েন্দা-রাজ’ কেন? গোয়েন্দা শবরের স্রষ্টা, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে এর কারণ ওই চরিত্রগুলির জনপ্রিয়তাই। তাঁর কথায়, ‘‘জনপ্রিয় চরিত্রকে ব্যবহার করেই রঙ্গ-ব্যঙ্গ, রাজনৈতিক তরজা হয়ে থাকে। সেটা ভালই।’’
গোয়েন্দা এবং গোয়েন্দা-সহযোগী, দুই ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। গোয়েন্দা শবর হয়েছেন, আবার অজিতের ভূমিকাতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। নিজে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকলেও বাঙালির তৈরি মিম-এ গোয়েন্দাদের জনপ্রিয়তার কথা শুনে শাশ্বত বলছেন, ‘‘আমার মনে হয়, সব বাঙালিই মনে মনে একজন গোয়েন্দা। গোয়েন্দা কাহিনি পড়ার সময় বা ছবি দেখার সময় বাঙালি পাঠক বা দর্শকও মনে মনে দোষীকে পাকড়াও করার চেষ্টা করেন। তাই হয়তো এ ক্ষেত্রেও গোয়েন্দারা এত জনপ্রিয়।’’
দীর্ঘদিনের একটানা জনপ্রিয়তাও বাঙালি চরিত্রগুলির ‘ব্র্যান্ড-ভ্যালু’ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞাপন স্রষ্টা শৌভিক মিশ্র। সেই সঙ্গেই তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এই মিমগুলি যাঁদের জন্য করা হচ্ছে তাঁরা হয়তো একটু সিরিয়াস, একটু বেশি বয়সের। কারণ এই ধরনের কৌতুক একটা নির্দিষ্ট রুচির মানুষের জন্যই।’’ তবে কমবয়সিরাও অনেকে ‘বাঙালি’ পরিচয়ের গর্বের জন্য মিম-এ বাঙালি চরিত্রকে পছন্দ করতে পারে বলে মত সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের সঙ্গে যুক্ত অনন্যা বিশ্বাস। তিনি মনে জানাচ্ছেন, যা জনপ্রিয়, তারই রমরমা বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তবে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজস্ব পরিচয় তৈরি করার ক্ষেত্রে কমবয়সিরা অনেক সময়ই তুলে ধরে তার নিজস্ব আঞ্চলিক-সাংস্কৃতিক পরিচিতি, সেগুলোর নানা প্রতীককে। অনন্যার কথায়, ‘‘গ্লোবাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকাল হওয়াটাও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রগতিশীলতার পরিচায়ক বলে মনে করেন অনেকেই।’’